নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ আগস্ট, ২০২১ ০১:২৭

ওসমানী বিমাবন্দরে কি ঘটেছিলো জামিলা চৌধুরীর সাথে?

বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছিলেন জামিলা চৌধুরী নামের এক প্রবাসী নারী। গত বুধবার বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার লন্ডন ফিরে যাওয়ার কথা। টিকিট কাটা, লন্ডনে কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং করাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিলো।

নির্ধারিত দিনে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজিরও হন সিলেটের খাদিম এলাকার এই নারী। তবে যুক্তরাজ্য ফিরে যাওয়া হয়নি তার। বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া হয় তাকে।

জামিলার অভিযোগ, বিমান বন্দরে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তারা হয়রানি ও অসৌজন্যমূলক আচরন করেছেন তার সাথে।

বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা তার কাছে ঘুষ দাবি করেছিলেন অভিযোগ করে জামিলার দাবি, কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারনেই তিনি যুক্তরাজ্য ফিরতে পারেননি।

তবে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দাবি, জামিলা চৌধুরী নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ওজনের পণ্য নিয়ে বিমানে উঠতে চেয়েছিলেন। এজন্য অতিরিক্ত ফি চাওয়া হলেও তিনি দিতে রাজি হননি। এনিয়ে বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের সাথে তার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।

এদিকে প্রবাসী নারীকে হয়রানির অভিযোগ ওঠায় শনিবার বিমান বাংলাদেশের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

এরা আগে শুক্রবার রাতে জামিলা চৌধুরীর বাসায় যান বিমানের কর্মকর্তারা। বুধবারের ঘটনার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেন। এবং ৪ আগস্ট বিমানের পরবর্তী ফ্লাইটে তাকে যুক্তরাজ্য পাঠানো হবে বলে আশ্বাস দেন।

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমানের স্টেশন ব্যবস্থাপক চৌধুরী ওমর হায়াত শনিবার বিকেলে জানান, প্রবাসী এক নারীকে হয়রানির অভিযোগ ওঠায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দুজনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। তবে অই দুই কর্মকতার নাম প্রকাশ প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় দুই জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদেরকে ঢাকায় গিয়ে রিপোর্ট করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে আজকে তারা ঢাকায় যেতে পারেননি।

চৌধুরী ওমর হায়াত আরো বলেন, গত ২৮ জুলাই ওই নারীর সঙ্গে সৃষ্ট ঘটনার জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বাসায় গিয়ে শান্তনা দিয়ে বলেছি, আগামী ৪ আগস্ট যে ফ্লাইট আছে, সেই ফ্লাইটে যেতে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। এছাড়া ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলইন্স কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। রোববার (১ আগস্ট) তদন্ত করতে আসবেন বিমানের জিএম পদবির এক কর্মকর্তা।

২৮ জুলাই ওসমানী বিমানবন্দরে গিয়ে বিমানের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার চিত্র নিজের মোবাইলে ধারন করেন জামিলা। তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এরপর টনক নড়ে বিমান কতৃপক্ষের।

জামিলা বলেন, গত ২৮ জুলাই সিলেট থেকে লন্ডন সরাসরি ফ্লাটের বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ এর যাত্রী ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার লাগেজে অতিরিক্ত মালামাল ছিলো। এ কারণে আমার কাছে অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করেন এক কর্মকর্তা। আমি তা দিতে অপারগতা জানাই এবং বলি অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ফিরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি লাগেজ নিয়ে আমাকে বোর্ডিং পাস দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে আমার উপর পাসপোর্ট ছুঁড়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। আমাকে বোর্ডিং পাস না দিয়েই লাইন থেকে বের করে দেন।

তিনি বলেন, ‘আমি উপস্থিত অন্যন্য কর্মকর্তাকেও অনেক অনুরোধ করি, কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করেনি।’ এসময় জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরে নিজের অভিযোগ জানাতে চাইলেও তার অভিযোগ কেউ গ্রহণ করেনি বলেও জানান তিনি।

সিলেট বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াত বলেন, ওই যাত্রীর সাথে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি মালামাল বেশি ছিল। প্রতি কেজি ২ হাজার ৬১১ টাকা হিসেবে এক লাখ টাকার উপরে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু তিনি প্রথমে ওভার ওয়েটের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হননি। পরে যখন তিনি অতিরিক্ত লাগেজ ছেড়ে যেতে রাজি হন তখন কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে।

ওমর হায়াত আরো বলেন, নির্ধারিত সময়ের একঘন্টা আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কাউন্টার বন্ধ করতে হয়। কিন্তু ওই যাত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার লাগেজের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাই তাকে রেখেই বিমান ছাড়তে হয়েছে।

তিনি বলেন, তারপরও তিনি যে হয়রানির অভিযোগ করেছেন এ জন্য আমরা তার বাসায় গিয়ে ক্ষমা চেয়েছি। এই ঘটনায় দুজনকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। তদন্তও করা হচ্ছে।

বিমান কর্তৃপক্ষের এই অবস্থান সম্পর্কে শনিবার জামিলা চৌধুরী বলেন, এখন তার ক্ষমা চাচ্ছেন, ব্যবস্থা নিচ্ছেন, ক্ষতিপুরন দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমার চোখের জলের কি ক্ষতিপুরন কি দেবেন। আমার বাচ্চা ছেলে লন্ডনে আছে। সে অনেকদিন ধরে আমাকে দেখতে পাচ্ছে না। ফোন করে কান্নাকাটি করছে। এসবের কি ক্ষতিপুরন হবে?

তিনি বলেন, আমরা দেশে রেমিটেন্স পাঠাই। দেশের টানে এখানে আসি। আমরা তো কোনো সুবিধা চাই না। কিন্তু হয়রানি ও অপমান করা হবে কেনো?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত