নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:০৩

আলোচনার প্রস্তাব শিক্ষক নেতাদের, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাখ্যান

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির নেতারা। তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের আন্দোলনে যারা সংহতি প্রকাশ করবেন কেবল তাদের সাথেই আলোচনা করবেন তারা।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারে রাত ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার বিকেলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহিবুল আলমের নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতির কয়েকজন নেতা উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় আসেন।

দুপুর থেকেই উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক নেতারা সেখানে এসে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে তাদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দেন। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এরপর সেখান থেকে চলে যান শিক্ষক নেতারা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, আমাদের উপর হামলা হয়েছে। গুলি করা হয়েছ। এখন আমাদের সাথে কীসের আলোচনা। এখন উপাচার্য পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন- এটিই আমরা চাই।

তিনি বলেন, কেউ আলোচনা করতে চাইলে আগে আমা্দের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে আসার আগে দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের সাথে তার বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস।

উপাচার্য কার্যালয় থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান সম্ভব। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করতে চাই। এভাবেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।

তিনি শিক্ষার্থীরা আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি ড. তুলসী কুমার দাস।

এদিকে, শাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য রাত ১০টার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বিকেলে উপাচার্য ভবনের সামনে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ঘোষণা মাইক থেকে এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা জানানো হয়।

সোমবার রাতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই-তিন শ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

তিন দফা দাবিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রোববার সন্ধ্যায় পুলিশের সংঘর্ষ হয়। অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে গিয়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করলে এই সংঘাত বাধে। এতে পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে পুলিশ তাদের ওপর হামলা ও গুলি করে।

তবে এবার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই হামলার অভিযোগ এনে মামলা করল পুলিশ।

এজাহারে বলা হয়, রোববার আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ২০০ থেকে ৩০০ ‘উচ্ছৃঙ্খল’ শিক্ষার্থী পুলিশের কাজে বাধা দেয়।

সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ ছাড়া পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা গুলি ছোড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।

তবে এই মামলায় কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল। মঙ্গলবার দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে এসে তিনি বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এছাড়া একটি মামলা হলেও কাউকে হয়রানি করা হবে না।

আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করতে এসে আলোচনার মাধ্যমে যাতে সমাধানে পৌঁছা যায় সেই পথ খোলা রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান নাদেলও।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখও জানিয়েছেন, কোনো ঘটনা ঘটলে মামলা দায়ের করাটা আমাদের রুটিন কাজ। এজন্য কোনো শিক্ষার্থীকে হয়রানি করা হবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত