জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ

১৮ মে, ২০২২ ১৪:২৬

বন্যার পানিতে ভাসছে গোলাপগঞ্জের বাঘা, খাদ্য সংকট

অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম পানিতে ভাসছে। এসব গ্রামের প্রায় ৬০/৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পড়েছেন চরম খাদ্য সংকটে।  ইতিমধ্যে এ ইউনিয়নের ৪টি স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে কয়েক শতাধিক পরিবার গবাদি পশু সহ আশ্রয়গ্রহণ করেছেন। আবার অনেকে আশপাশ এলাকার আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

জানা যায়, উজান নেমে আসা ঢল ও গত কয়েকদিনের অব্যাহত ভারী বর্ষণে সুরমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঘা ইউনিয়নের  রুস্তমপুর, এখলাছপুর, পূর্বগাঁও, দক্ষিণ কান্দিগাঁও, উত্তরগাঁও, লালনগর, রামগঞ্জ, মজিদপুর, জালালনগর, খালপার, নলুয়া, কালাকোনা, সোনাপুর, দক্ষিণ বাঘা, গণ্ডামারা সহ বাঘা ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম পানিতে ভেসে গেছে। এতে এসব এলাকার লোকজন চরম বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে এসব এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে ।

মঙ্গলবার সরেজমিন বাঘা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। পানিবন্দীরা গবাদিপশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। বসতঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেকে মাচাঙ বেঁধে, খাটের উপর গৃহপালিত পশু রাখার পাশাপাশি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আবার কেউ কেউ উঁচু এলাকার আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

এসব এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট-হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ব্যুরো ধান খেত ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। সুরমা নদীপানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বহু স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে।

তুরুকভাগ গ্রামের রেদওয়ান হোসেন টিপুর বসতঘর ডুবে গেছে। তিনি জানান, তাদের পুরো ঘরে হাঁটু পানি রয়েছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘরে পানি ঢুকে গেছে। এতেকরে  ঘরে থাকা জরুরি অনেক আসবাবপত্র পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের সবাইকে নিয়ে রাস্তার পাশে একটি ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। তাছাড়া সাপ বিচ্চুর ভয়তো রয়ছেই। বন্যার কারণে ঘর থেকে বের হতেও পারছিনা।

রস্তমপুর গ্রামের সালাম মকবুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসান মামুনের ঘরেও হাঁটুপানি। তিনি জানান, কোনমতে ঘরের খাটে উপর ঘুমাচ্ছি। খুবই বেহাল অবস্থা। রাস্তাঘাটও ডুবে যাওয়ায় ঘর থেকে বের হতে পারছিনা।

কান্দিগাঁও গ্রামের আবুল কালাম জানান, আমাদের গ্রামের মেইন রোডে হাঁটু পানি। গ্রামের প্রায় সবকটি বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। এলাকার মানুষ খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে দিনমজুর হতদরিদ্র মানুষ খুবই কষ্টে আছে। তিনি অতিসত্বর বাঘা এলাকাকে বন্যা দুর্গত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

বাঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বলেন, পুরো বাঘা ইউনিয়ন পানির নিচে ডুবে গেছে। আমি সার্বক্ষণিক এসব এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর রাখছি। পাশাপাশি পানিবন্দীদের সাহায্যের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেছি। এছাড়াও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, সিলেট-৬ আসনের এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। উনি আমায় আশ্বস্ত করেছেন যে খুব শিগগিরই ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছেন। পাশাপাশি এসব অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসতে উপজেলার বিত্তবান ও প্রবাসীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

শুধু বাঘেই নয় উপজেলা গোলাপগঞ্জ পৌরসভা, ফুলবাড়ি ইউনিয়ন, গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন এবং আমুড়া ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সুরমা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি ও অব্যাহত বর্ষণে প্রতিদিনই এসব ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকছে। যত সময় যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ গোলাম কবির জানান, গোলাপগঞ্জের সুরমা তীরবর্তী পুরো বাঘা ইউনিয়ন, আমুড়া ইউনিয়ন গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে ত্রাণ এসে পৌঁছেছে। আমরা আজ (বুধবার) থেকেই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত