নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ মে, ২০২২ ২৩:৪৭

বন্যায় বন্ধ সিলেটের ৭ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর কিছুদিন ক্লাস হওয়ার পরই শুরু হয় ঈদের ছুটি। সেই ছুটি শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতেই সিলেটে বন্যার কারণে পাঠদান ফের ব্যাহত হচ্ছে।

সিলেটের অন্তত সাড়ে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ২০০-এর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। ফলে জেলার অন্তত সাড়ে ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়, যা এখনও চলমান। একই সঙ্গে উজান থেকে নামছে ঢল। এতে গত ১১ মে থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করে। আর গত সোমবার থেকে পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করে সিলেট নগর। এখন বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া পানি নামার সময় আরও দু-একটি উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই দশা হতে পারে।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেটের জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী ডিগ্রি কলেজ। এই কলেজের শিক্ষক ফারুক আহমদ বলেন, ‘আমাদের শ্রেণিকক্ষগুলোতে পানি ঢুকে গেছে। পুরো এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পাঠদান অব্যাহত রাখা সম্ভব না। তবে যেহেতু ডিগ্রি পরীক্ষা চলছে, তাই অন্য কেন্দ্রে আমাদের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার দীর্ঘ ছুটির পর বন্যার কারণে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা আবার ক্ষতির মুখে পড়বে। পানি না কমলে ক্লাসের কার্যক্রম শুরু করা যাবে না।’

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৪০০টি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে, সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি বাড়ার কারণে নতুন করে আরও প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জেলার সব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যে বিদ্যালয়গুলোতে এখনও পানি ওঠেনি, সেগুলোকে প্রয়োজনে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।’

এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় দেড় শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পানি উঠেছে। এগুলোতেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে কানাইঘাটে ৪২টির মধ্যে ৩৭টি, বিশ্বনাথে ৫১টির মধ্যে ৫টি, জৈন্তাপুরে ৩২টির মধ্যে ১২টি, সদরে ৯৫টির মধ্যে ১৮টি, গোয়াইনঘাটে ৪৮টির মধ্যে ১৮টি ও কোম্পানীগঞ্জে ২৬টির মধ্যে ১৫টি। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমা ও নগরে আরও ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পানি বাড়ার কারণে প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। এগুলোতে আপাতত পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।’

এখনও পানি না ওঠা অনেক বিদ্যালয়েও বন্ধ রয়েছে পাঠদান। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৯৯টি ও নগরে ১৭টি বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ২০টি কলেজ প্লাবিত হয়ে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

এদিকে জেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম চলছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।

নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা রজতকান্তি গুপ্ত। তার ছেলে এবার সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। স্কুলে এখন নির্বাচনি পরীক্ষা চলছে।

রজত বলেন, ‘তিন দিন ধরে বাসার ভেতরে পানি। বিদ্যুৎও নেই। ঘরেই থাকা যাচ্ছে না। সে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে কীভাবে, আর পানি ডিঙিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে কী করে?’ তাই পরীক্ষা আপাতত বন্ধ রাখার আহবান জানান তিনি।

তবে পরীক্ষা বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বন্যার কারণে কোনো শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষা দিতে না পারে, তবে আমাদের কাছে আবেদন করতে পারে। আমরা তা বিবেচনা করব।’

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, ‘পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি তো হবেই। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে তো আমাদেরও কিছু করার নেই। পানি কমলে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত