নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ মে, ২০২২ ১৬:৪৬

বোরোর পর আউশেও বন্যার আঘাত

সিলেটে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আউশ ধান চাষে মনোযোগী হয়ে ছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং এলাকার কৃষক নিজাম উদ্দিন।

দুই একর জমিতে আউশের বীজ রোপন করেছিলেন। বীজ থেকে চারাও গজিয়ে ছিল। কিছুদিনের মধ্যে এই চারা রোপনের পরিকল্পনা করছিলেন নিজাম। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় গুড়েবালি। বন্যায় তলিয়ে গেছে নিজামের বীজতলা।

নিজাম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘৪ দিন ধরে বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। সব চারা পচে যাবে। গত মাসে বন্যায় বোরো ধান গেছে। এবার আউশও চলে গেলে আমাদের বছর চলবে কী করে? খাবো কী?

কেবল নিজাম উদ্দিন নন, এই আক্ষেপ এখন সিলেটের বেশিরভাগ কৃষকের। গত মার্চ-এপ্রিলের অসময়ের বন্যায় সিলেটের সুনামগঞ্জে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায় বোরোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আউশও।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসেবে, চলমান বন্যায় বুধবার পর্যন্ত আউশ ধানের বীজতলা এক হাজার ৩০১ হেক্টর, বোরো ধান এক হাজার ৭০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি এক হাজার ৪ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে সিলেটে বৃহস্পতিবারও অব্যাহত রয়েছে পানি বৃদ্ধি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টিও। জেলা প্রশাসনের হিসেবেই, সিলেটে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পাওয়া হিসেবে, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ৩৪ বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকেছে বিভিন্ন এলাকায়।

বন্যায় সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পর এবার বিয়ানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পানি উঠেছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সে। এসব উপজেলার অনেক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রেও পানি উঠে গেছে। এতে আশ্রিতরা পড়েছেন বিপাকে।

সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে এবং ১৫টি ইউনিয়ন আংশিকভাবে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে সিলেট সদর ও জৈন্তাপুর উপজেলায় নৌকাডুবিতে ৩ জন মারা গেছেন। গোলাপগঞ্জে পাহাড় ধসে একজন মারা গেছেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ‘জেলায় ২৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৪৭৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদিপশুর জন্য ২২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে এরই মধ্যে ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ১৪৯ টন চাল, ১৭৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানি দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ২৫ লাখ টাকা, ২০০ টন চাল ও ৪০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত