নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ মে, ২০২২ ১২:৪৬

সিলেটবাসীকে আরও পাঁচ দিন পানিবন্দি থাকতে হবে

আরও পাঁচ দিন পানিবন্দি থাকতে হবে সিলেটবাসীকে। ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করা বন্যার পানি নেমে আগের অবস্থায় ফিরবে সিলেট নগরীর চিত্র। তবে সিলেটবাসী যেন আর এরকম বন্যার পরিস্থিতির শিকার না হন সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

শনিবার (২১ মে) পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর (পুর) দপ্তরের সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) এস এম শহিদুল ইসলাম এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বন্যার পানি কমছে। ফলে সিলেটে আর বন্যা পরিস্থিতি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় আরও পাঁচ দিন পানিবন্দি থাকতে হবে সিলেটবাসীকে। বন্যায় যেখানে যেখানে বাঁধ ভেঙেছে সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে আবার নতুন করে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে।’

এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে যে নদী ও খালগুলো আছে, সেগুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ড্রেজিং করার লক্ষ্যে আমরা এখানকার নদীগুলো নিয়ে স্টাডি করছি। সিলেটের সুরমা নদীর গতিপথ ঠিক থাকলেও এর ড্রেজিং করতে হবে। এ লক্ষ্যে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এখনো প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন হয়নি, তবে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলছে।’ সুরমা নদীর ড্রেজিং হয়ে গেলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি কমে যাবে বলে জানান তিনি।

এদিকে সিলেটে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বাড়ছে কুশিয়ারার পানি। ফলে নগরসহ আশপাশের এলাকার পানি কিছুটা কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো), সিলেট-এর তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২১ মে) সকাল ৯টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার এ দুটি পয়েন্টে পানি প্রবাহ যথাক্রমে ১১ সেন্টিমিটার ও ৭ সেন্টিমিটার কমেছে। এছাড়া, শনিবার একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর আমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫৫ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার আমলসীদে ১১ সেন্টিমিটার ও শেওলায় ৩ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ কম ছিল।  তবে, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি শুক্রবারের চেয়ে শনিবার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবার এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এদিকে নগরে পানি কিছুটা কমলেও কমেনি বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ। বিদ্যুৎ ও গ্যাসহীনতা, খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি উপদ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। সিলেটে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ।

এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ এড়াতে নগর ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। শুক্র ও শনিবার নগরের প্লাবিত এলাকার অনেক বাসিন্দাকে নগর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে দেখা যায়।

গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। সেই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। ফলে ১১ মে থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে থাকে। আর গত ১৩ মে থেকে সিলেট নগর প্লাবিত হতে থাকে। সেখানে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবারের মতো শনিবারও সুরমার পানি কমা অব্যাহত আছে। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের দিনের চাইতে কয়েক সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে।

সিলেটের ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ৩২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো মজিবর রহমান বলেন, ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি এখনও নামেনি। সরকার বন্যার্তদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত