নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ মার্চ, ২০২৩ ১৯:০০

লাকড়ি বিক্রেতা থেকে বড়লেখার ‘সুলতান’

মানিকগঞ্জে থানায় এক যুবককে নির্যাতন চালিয়ে চোরাচালানের ৩০ ভরি স্বর্ণের দাম আদায়ের ঘটনায় আলোচিত সুলতান মনসুর হিরণকে নিয়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তার অবিশ্বাস্য উত্থানের তথ্য এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ ছবি এলাকায় ভাইরাল হয়েছে।

জানা যায়, সুলতানের বাবা বড়লেখার পাখিওয়ালা গ্রামের আমিন আলী ৫০-৬০ বছর আগে এ উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির কাশেমনগরে শ্বশুরবাড়িতে বসতি গড়ে তোলেন। একসময় তিনি, সুলতানসহ তার তিন ছেলে গরু কেনাবেচা ও লাকড়ির ব্যবসা করে কোনো রকম জীবনধারণ করতেন। ২০০৮ সালের দিকে সুলতান দুবাই গেলে তাদের সংসারের দ্রুত উন্নতি ঘটতে থাকে। এখন তিনি বড়লেখার সুলতান হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। সুলতানরা সেই মামার বাড়িতে প্রাসাদোপম ফটকওয়ালা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

ফসলি জমিও কিনেছেন। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ডেল জানান, ১৫-১৬ বছর আগেরও তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। ৩৮ বছর বয়সী সুলতান বিদেশ যাওয়ার পর থেকে কিছুদিনের মধ্যে তাদের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হতে থাকে।

স্থানীয়রা বলছেন, তারা জানতেন সুলতান স্বর্ণের ব্যবসা করেন। কিন্তু আসলে তিনি যে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত তা তারা জানতেন না। স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় সম্প্রতি তিনি জেলে গেলেও দ্রুতই জামিন পান । পাঁচ-ছয় মাস আগেও বড়লেখার বটতলের দুবাই প্রবাসী সাঈদ নামে এক ব্যক্তি দেশে আসার সময় তার কাছে ১৭ লাখ টাকার স্বর্ণ দিয়েছিলেন সুলতান। ঢাকায় এক লোকের কাছে পৌঁছে দিতে বলেছিলেন সেই স্বর্ণ। কিন্তু সাঈদ ওই স্বর্ণ মেরে দেন।

সুলতানের বড় দুই জয়নাল মিয়া (৫০) ও ফারুক মিয়া (৪৪) দুবাইয়ে থাকেন। তারা কিছুদিন পরপর দেশে আসেন । এক দেড় মাস দেশে থেকে চলে যান। তারা দুবাই থেকে এলাকায় স্বর্ণ এনে বিক্রি করেন বলে অনেকে জানিয়েছেন।

ফারুক মিয়া জানান, তার ছোট ভাই সুলতান দুবাইয়ে সরকারি গাড়ি চালান। পাশাপাশি ফ্ল্যাটের ব্যবসা করেন। দেড় বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন। স্ত্রীর ১২ লাখ মোহরানার টাকা স্বর্ণালংকারে মাধ্যমে পরিশোধের জন্য ৮-৯ মাস আগে ৩০ ভরি স্বর্ণ পাঠান মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি গ্রামের নাজমুল হুদার মাধ্যমে। এজন্য নাজমুলকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও বিমান টিকিট করে দেন সুলতান। ওই স্বর্ণ আনার জন্য ফারুক গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে গেলেও নাজমুলকে পাননি। তিনি মোবাইল বন্ধ করে বাড়িতে চলে যান। এর চার-পাঁচ দিন পর সুলতান দেশে এসে মন্ত্রীর কাছে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন।

ফারুকের দাবি, স্বর্ণ আনার বৈধ কাগজপত্র আছে জেনে সাটুরিয়া থানার ওসিকে ফোন করে মন্ত্রী সুলতানকে সাহায্য করার নির্দেশ দেন। এর পর নাজমুলকে ধরে এনে শারীরিক নিযার্তন করে ১৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

ফারুক মিয়া আরও জানান, গত ৫ ডিসেম্বর দুবাই যাওয়ার পথে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আড়াই কোটি টাকার স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে সুলতানকে। তবে এটাকে মিথ্যা মামলা বলে দাবি করেন ফারুক। বর্তমানে সুলতান জামিনে আছেন বলে জানা গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক বলেন, স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে তিনি কিংবা তার ভাই জড়িত নন। তাহলে ৩০ ভরি স্বর্ণ স্ত্রীকে দেওয়া কতটা গ্রহণযোগ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনকার বিয়ে বুঝেনই তো। বিদেশি হুনলে দাবি করে অনেক বেশি। তাই দিতে বাধ্য হয়েছে।’

বড়লেখা থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, সুলতানের বিরুদ্ধে বড়লেখার থানায় কোনো মামলা নেই। ঢাকার কোনো এক থানায় তার নামে মামলা রয়েছে বলে শুনেছি। তবে কী ধরনের মামলা তা জানি না।

এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
সূত্র: সমকাল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত