নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ জুন, ২০২৩ ২১:২৯

নবগঠিত ১৫ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেন যারা

সম্প্রসারিত সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রথমবারের মতো ৪২টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরনো ২৭টি ওয়ার্ডে সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১৫টি ওয়ার্ড। নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল বেশি।

তবে পুরনো ২৭ ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত কম লক্ষ্য করা যায়। এসব ওয়ার্ডের অনেক কেন্দ্র ফাঁকা দেখা গেছে। তবে ভোটকেন্দ্র ফাঁকা থাকলেও বাইরে ভিড় দেখা গেছে।

বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় ১৯০টি কেন্দ্র থেকে বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফলে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম জানা যায়। নবগঠিত ১৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন একঝাঁক নতুন মুখ।

দক্ষিণ সুরমার গাংগু, কাজীরখলা, রিয়াছতপুর, মাজপাড়া, সুনামপুর, পশ্চিম বরইকান্দি, কামুশুনা, তেলিরাই, নিয়ামতপুর গ্রাম এবং ধরাধপুরের রায়ের গাঁও, কাজীরখলা, কামুশুনা গ্রাম নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। নগরীর অংশ হওয়া নবগঠিত এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন রায়হান হোসেন। তিনি রেডিও প্রতীকে নির্বাচন করেছেন।

দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুর, পর্বতপুর, বদিকোনা (আংশিক), ধরাধরপুর, বদিকোনা আংশিক, উম্মুর কবুল, লাউয়াই, মোহাম্মদপুর, ধরাধরপুর গ্রাম নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম শাকিল।

দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর, চান্দাই, তেলীপাড়া, চান্দাই পশ্চিমপাড়া, টিয়রগাঁও, তালুকদার পাড়া, নজরপুর, বকশীপুর, গালিমপুর, ও দাউদপুর গ্রাম নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মো. রকিব খান। এই ওয়ার্ডে মোট সতেরোজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

সদর উপজেলার কুইটুক, নয়া বস্থি, মুরাদপুর, পেশনেওয়াজ(মুক্তরচক), মুরাদপুর, পীরের চক, মিরের চক আংশিক, গ্রাম নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৩১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী নজমুল হোসেন।

সদর উপজেলার কল্যানপুর আংশিক, বেতার কেন্দ্র, ইসলামপুর আংশিক, ইসলামপুর কলোনী, ইসলামপুর দক্ষিন-ফাল্গুনী, মুসলীম নগর, মুগীর পাড়া, মুড়িলা, নূরপুর, নাথপাড়া, আটালু, পূর্ব ভাটপাড়া, পশ্চিম ভাট পাড়া, কান্দিহুতা, মীরাপাড়া, পূর্ব শাপলাভাগ, সোনাপুর, টুলটিকর আবাসিক এলাকা, পূর্ব কুশিঘাট, শাহপরান অবাসিক এলাকা, কৃষি খামার আংশিক এলাকা নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৩২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন রুহেল আহমদ। তিনি লাটিম প্রতীকে নির্বাচন করেছেন।

সদর উপজেলার খাদিমপাড়া আংশিক, কালাটিকর আংশিক, মনিপুরি পাড়া বস্তি, বহর দাস পাড়া, ধনকান্দি,পাঁচগরি, লালখাটংগী, শাহপরান আবাসিক এলাকা, বহর নোয়াগাও, এটিআই, ভাওয়াল টিলা, ইসলামাবাদ, কল্লগ্রাম নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৩৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকে নির্বাচন করেছেন তিনি।

সদর উপজেলার খাদিমপাড়া আংশিক, মীরমহল্লা, বহর কলোনী, বাহুবল আবাসিক এলাকা, উদ্দিন টিলা, কালাটিকর আংশিক এলাকা নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৩৪নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ক্যাপ প্রতীকের প্রার্থী জয়নাল আবেদীন।

সদর উপজেলার জাহানপুর, সৈয়দপুর আংশিক, মোহাম্মদপুর, চামেলীবাগ(গোয়ালগাও), শ্যামলী আবাসিক এলাকা, সিলেট টেক্সটাইল আংশিক, ইসলামপুর পূর্ব, সরকারি কলেজের আংশিক, প্রকৌশল কলেজ, দুগ্ধ খামার, সৈয়দপুর আংশিক, জাহানপুর উত্তর (বুড়িবস্তি) ও আলুরতল এলাকা নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৩৫নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। এই ওয়ার্ডে মোট তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

সদর উপজেলার উত্তরবালুচর, আরামবাগ, দূর্গাবাড়ি, এমসি কলেজ আবাসিক এলাকা, টিভি গেইট হাসপাতাল এলাকা, বন বিভাগ টিলা, ইকো পার্ক, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এলাকা নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৩৬নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) হিরন মাহমুদ নিপু। এই ওয়ার্ডে মোট পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

সদর উপজেলার টিলাগড়, ডরিয়া, বড়গুল, দুসক, শাবিপ্রবি, আখালিয়া, নতুন বাজার আবাসিক এলাকা, যগীপাড়া, দামালী পাড়া, আখালিয়া ঘাট, ক্বারীপাড়া, খলাপাড়া, চান্দিয়ালা, নোয়াপাড়া ও বিজিবি এলাকা এলাকা নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৩৭নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মো. রিয়াজ মিয়া। রিয়াজ মিয়া জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

সদর উপজেলার নাজির গাঁও, টিয়রবাড়ি, পীরপুর আংশিক, খালিগাঁও, হায়দরপুর, চরুগাঁও, সাহেবের গাঁও, শেখপাড়া, ওয়াবদা ও কুমারগাঁও এলাকা নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৩৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের প্রার্থী বেলাল আহমদ।

সদর উপজেলার শাহাপুর, নোয়াগাঁও আংশিক, নয়া খুরুমখলা, খুরুমখলা আংশিক, পীরপুর আংশিক, টুকেরগাঁও আংশিক, নোয়াপাড়া, তালুকদার পাড়া, মইয়ারচর, নোয়াগাঁও আংশিক, নোয়াগাঁও হিন্দু পাড়া, টুকের গাঁও আংশিক ও গৌরীপুর এলাকা নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে। ৩৯নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন। এই ওয়ার্ডে মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

কুচাই, পালপুর, দক্ষিণ কুশিঘাট, চিটা শ্রীরামপুর, রুগনপুর, সামাল হাসান, মজলিশপুর (আংশিক), গংগানগর, মনিপুর (আংশিক), মজলিসপুর(আংশিক), মনিপুর(আংশিক), আলমপুর (আংশিক), ছিটা গোটাটিকর, গংগা রামেরচক এলাকা নিয়ে গঠিত ৪০নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট প্রতীকের প্রার্থী লিটন আহমদ।

পশ্চিমভাগ, পশ্চিমভাগ আ/এ, সারপিং নিয়ে গঠিত ৪১নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত ট্রাক্টর প্রতীকের প্রার্থী ফখরুল আলম।

সুলতানপুর, তৈয়ব কামাল(আংশিক), শেখ পাড়া (আংশিক), শ্রীরামপুর, শেখ পাড়া (আংশিক), তৈয়ব কামাল (আংশিক), শেখপাড়া (আংশিক) নিয়ে গঠিত ৪২নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের প্রার্থী মতিউর রহমান।

এর আগে বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৪২ ওয়ার্ডে এই সিটিতে এবার পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এবার মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৬০, নারী দুই লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন এবং ছয়জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।

সিলেট সিটিতে মেয়র পদে ৮ জন, ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র মো. আব্দুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মো. শাহ জাহান মিয়া এবং মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোটে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা ছিল। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের যেমন চ্যালেঞ্জ ছিল, তেমনি নির্বাচন কমিশনেরও ছিল। বৈরী আবহাওয়া এবং বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জন করায় এ শঙ্কা প্রকট হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিত্র অনেকটা ভিন্ন লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। বিশেষ করে নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

সব কেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি দেখা গেছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে দেখা গেছে ভোটারদের উপস্থিতি। এসব ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে নেপথ্যে কাজ করেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। মূলত তারাই ভোট টানতে নানা কৌশলে ভোটারদের আগ্রহী করে তুলেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত