নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ অক্টোবর, ২০২৩ ১৭:১১

সমশের মবিন ‘বিশ্বাসঘাতক ও পথভ্রষ্ট’: ফয়সল চৌধুরী

‘তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারপার্সন সমশের মবিন চৌধুরীকে ‘বিশ্বাসঘাতক, নীতিহীন ও পথভ্রষ্ট’ বলেছেন বিগত নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী। শনিবার (২১ অক্টোবর) বেলা ২টায় সিলেট মহানগরের মিরবক্সটুলার একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক টক-শোতে ফয়সল আহমদ চৌধুরীকে নিয়ে ‘মিথ্যা তথ্য’ ছাড়ানোর অভিযোগ উঠে সমশের মবিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত রয়েছে। কয়েকদিন আগে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা করে সমশের মবিন চৌধুরী এই দুই উপজেলায় ‘অবাঞ্চিত ঘোষণা’ করা হয়েছে।

এ ইস্যুতে শনিবার সমশের মবিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন ফয়সল আহমদ চৌধুরী। সমশের মবিন চৌধুরীর বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ও ফয়সল চৌধুরীর বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলায়।

সাবেক কূটনীতিক শমশের মবিন চৌধুরী এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ২০১৮ সালের অক্টোবরে তিনি বিকল্প ধারায় যোগ দেন।

সম্প্রতি তৃণমূল বিএনপির প্রথম সম্মেলনে সমশের মবিন দলটির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব নেন। গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসন তার নিজের নির্বাচনী এলাকা।

শনিবার লিখিত বক্তব্যে ফয়সল চৌধুরী বলেন- ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। দলটি বর্তমান কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের দাবিতে অন্যান্য সমমনা দলকে নিয়ে দেশব্যাপী এক দফার আন্দোলন করছে। অন্যদিকে সরকার এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় কতিপয় কিংস পার্টির জন্ম দিয়ে বিশ্ববিবেককে বিভ্রান্ত করে কথিত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু বিএনপি’র অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। তথাপি বর্তমান অবৈধ সরকার তার ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করার জন্য তাদের কিছু ক্রীড়নক মাঠে নামিয়েছে। এরা সরকারের এজেন্ট হিসেবে সাধারণের মনে মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিভ্রান্ত সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত হয়েছে।’

ফয়সল চৌধুরী বক্তব্যে আরও বলেন- ‘সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘এডিটর গিল্ডস’ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তেমনি এক ব্যক্তি সমশের মবিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী তথা আমার ও স্থানীয় বিএনপি সম্পর্কে নানা বিভ্যান্তিকর মন্তব্য করেন। তিনি (সমশের মবিন) তার বক্তব্যে চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে আমার সাথে ফোনালাপের একটি বিষয়ের অবতারণা করেন। আমি এমন মিথ্যা বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। মিথ্যাচারেরও তো একটা সীমা থাকে। এমন নিলর্জভাবে কেউ মিথ্যে বলতে পারে তা আমার কাছে অকল্পনীয়। অথচ যিনি এই মিথ্যাচার করছেন তিনি নিজেকে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে দাবি করেন। অবশ্য তিনি রাজনীতিবিদ, তবে দলছুট, নীতিহীন এবং পথভ্রষ্ট।’

ফয়ছল চৌধুরী বলেন- ‘আমি জাতীয়তাবাদী দলের একজন নিবেদিত কর্মী। দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল থেকে রাজনীতি করে আসছি। দলে আমার ত্যাগ ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আমাকে সিলেট-৬ আসনে (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং আমি নির্বাচন করি। কিন্তু বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের কারচুপি এবং দিনের ভোট রাতে করে ফেলার মাধ্যমে আমার জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওই সময় সমশের মবিনের মতো দলছুট, বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তির সঙ্গে আমার যোগযোগ থাকার কোনো প্রশ্নই উঠে না। কারণ যে দলের সাথে বেঈমানি করতে পারে সে যে-কারো সাথে বেঈমানি করতে পারে। অথচ এই ব্যক্তি সেদিন বৈঠকে বলেছেন আমার সাথে নাকি তার ফোনালাপ হয়েছে। শুধু তাই নয়- তিনি আমার দলকে হেয় করেছেন এবং বলেছেন, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে নাকি বিএনপির কোনো তৎপরতাই নেই। এটা যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং চরম মিথ্যাচার তা আপনারাই বুঝতে পারছেন। কারণ সিলেট-৬ আসনে আমার তৎপরতা এবং আমার দলের কর্মকাণ্ড আপনারা প্রতিনিয়ত দেখে আসছেন। আন্দোলন কিংবা নির্বাচনকেন্দ্রিক দলের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেকার্মীরা সদা প্রস্তুত রয়েছেন। সুতরাং আমার বেশি কিছু বলার নেই।’

তিনি বলেন- ‘সমশের মবিন চৌধুরী এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু দলের ক্রান্তি লগ্নে সরকারের দালালি করার উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বিকল্প ধারায় যোগদান করে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারে সংসদ নির্বাচন করার খায়েস করেন। কিন্তু দলছুট বিশ্বাসঘাতক এহেন ব্যক্তিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলে তার নমিনেশন বাজেয়াপ্ত হয়। কারণ তিনি সাকুল্যে ভোট পেয়েছিলেন ১৯১টি। এরপর তিনি দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে বসে থাকেন। বর্তমান সময়ে যখন দেশের গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দল একটি নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে ঠিক তখন আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করার অপতৎপরতা শুরু করেছেন বিশ্বাসঘাতক সমশের মবিন চৌধুরী। সরকারের ক্রীড়নক হয়ে কথিত একটি কিংস পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে আবারো সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবার খায়েস নিয়ে নানা কুটচাল ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ওই গোলটেবিল বৈঠকে স্থানীয় বিএনপি ও আমার সম্পর্কে চরম মিথ্যাচার করেন।

আমি মনে করি তার এই মিথ্যাচারের মূলে রয়েছে আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট করা। কিন্তু তিনি জানেন না যে, স্থানীয় বিএনপি ও তার প্রার্থীর জনপ্রিয়তাকে এভাবে মিথ্যাচরের মাধ্যমে নষ্ট করা সম্ভব নয় এবং তার এহেন আচরণ তাকেই আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত করবে।’

সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি অনেক শক্তিশালী রয়েছে উল্লেখ করে ফয়সল চৌধুরী বলেন- প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি এই দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মিটিং-মিছিল করে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রী নির্বাহি কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেল, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জুয়েল, বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুর রহমান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নোমান উদ্দিন মুরাদ, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জান উজ্জ্বল, গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মামুন আহমদ রিপন, পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুল আজিজ মুন্না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত