সাজু মারছিয়াং, শ্রীমঙ্গল

০৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১৭:৪৮

ঈদে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় মৌলভীবাজারের পর্যটন খাত

ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত মৌলভীবাজারের পর্যটন স্পটগুলো। উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো চা-গাছ। একইসঙ্গে পাহাড়ি ঝর্ণার কলতান। মৌলভীবাজার জুড়েই রয়েছে প্রকৃতির নানা নৈসর্গিক সৌন্দর্য।

জেলায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা একাধিক লেক আর শতাধিক পর্যটন স্পট এখন একেবারেই পর্যটক শূন্য। তবে ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে জেলার বিভিন্ন স্পটে অর্ধ লক্ষাধিক পর্যটক ঘুরতে আসবেন বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

মৌলভীবাজারকে সাজাতে কোন কার্পণ্য করেনি প্রকৃতি। চা বাগানের সবুজ গালিচা লাউয়াছড়ার প্রাণ-প্রকৃতি কিংবা হাওরের অথই জল এনিয়েই পযর্টন জেলা মৌলভীবাজার। একসময়ে পর্যটকমুখর এই জেলার নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র দেখতে দর্শনার্থীর নেই তেমন আনাগোনা। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের পদচারণায়  মুখরিত হয়ে উঠতো জেলার অন্তত ১০০টির ও বেশী দর্শনীয় স্থান। কিন্তু অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং দর্শনীয় পর্যটন স্থানগুলোকে ঢেলে না সাজানোর কারণে প্রকৃতির এমন মায়াভরা আঙিনা এখন পর্যটকশূন্য। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িতরা বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকেই কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন। তবে এবারের ঈদে আবারও ঘুড়ে দাড়ানোর চেষ্টা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

পর্যটকদের জন্য মৌলভীবাজারের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্রীমঙ্গল উঁচু-নিচু পাহাড়ে ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো চা-বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরি ও ত্রিপুরাদের গ্রাম, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বাইক্কাবিল হাইল, বধ্যভূমি ৭১, নিমাই শিববাড়ী, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফিনলে চা বাগানের ভেতরে ডিনস্টন সিমেট্রি।

জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে আরও আছে- কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, ধলই বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, রাজকান্দি বন খাসিয়া পল্লী,হাম হাম জলপ্রপাত,কলাবন, বড়লেখায় মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, রাজনগর উপজেলার কমলা রাণীর দীঘি, কাউয়াদীঘি হাওর, জলের গ্রাম অন্তেহরি।

জেলায় প্রায় দেড় শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ ও কটেজগুলো সাজানো-গোছানোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। ঈদের টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের আগমনে ভালো ব্যবসার প্রত্যাশা কথা জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল পর্যটন কল্যান পরিষদের যুগ্ন আহ্বায়ক কাজী সামছুল হক ।

হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা এখানে আসবেন। তাদের সেবা দিতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অতিথির জন্য রিসোর্টগুলো সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। আশা করছি এবার বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসবেন।

বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের শ্রীমঙ্গল শাখার সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে এবার আমাদের ট্যুর অপারেটরদেরও ব্যস্ত বেড়েছে। এবারের ঈদকে সামনে রেখে আমরা বেশ কিছু প্যাকেজ বিক্রি করতে পেরেছি, আশা করছি ঈদের আগে আরও কিছু পর্যটক ভ্রমণ প্যাকেজ নেবে।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, ‘পর্যটকরা প্রতি বছর ঈদের সময়টাতে চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে সপরিবারে ঘুরতে আসেন। আমরাও প্রতিবছর সেই মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করি। প্রতি বছরের মত এবারও আমরা পর্যটকদের বরণ করার জন্য মুখিয়ে আছি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও মাধবপুর লেকে আমাদের দুটি দল থাকবে। পাশাপাশি আরও দুটি ভ্রাম্যমাণ দল শহরজুড়ে থাকবে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়ও আমরা থাকব। জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। কোন পর্যটক যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে।

মৌলভীবাজার সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, ঈদের বন্ধে ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মৌলভীবাজারে পর্যটন স্পটগুলো বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। টুরিস্ট পুলিশও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে পরিকল্পনা করবে; আর জেলা পুলিশও সজাগ থাকবে। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত