
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ০০:২০
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জেলা প্রশাসকের পরিদর্শনকালে বিভিন্ন ত্রুটি ও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে বলে অফিসিয়েল ফেসবুক আইডিতে মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন।
গত সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আকষ্মিকভাবে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গেলে এসব চিত্র দেখতে পান।
৫০ শয্যার কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসকের অফিসিয়েল ফেসবুক আইডিতে তিনি মন্তব্য করেন, পরিদর্শনকালে হাসপাতালের বিভিন্ন অংশ অপরিচ্ছন্ন পাওয়া যায়। রোগীদের জন্য নির্ধারিত খাবারের মেন্যুতে ভাত, মাংস, ডাল ও সবজি অন্তর্ভূক্ত থাকলেও বাস্তবে সবজি পাওয়া যায়নি। দন্ত চিকিৎসকের চেম্বারে রোগীদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় রাখা ছিল, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই; সংক্রমণ প্রতিরোধে দরজা সর্বদা রাখার নিয়ম যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। উল্লেখিত বিষয় সমুহ দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।
জানা যায, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে আড়াইশ’ রোগী দেখছেন মাত্র দু’জন চিকিৎসক। হাসপাতালে ভর্তি আরো অর্ধশতাধিক রোগীর দেখভালও তাদের হাতে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান এর অভাবে এক্সরে, ইসিজিসহ কোন পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। চালু নেই অপারেশন থিয়েটারও। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা।
২০১৮ সালে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পরও জনবল সংকটে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ভুক্তভোগীরা। চিকিৎসা সেবার জন্য যে জনবল নিয়োগ করা প্রয়োজন তা করা হয়নি। চিকিৎসক সংকটের কারণে ভর্তি ও বর্হি:বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ২০১৮ সালে প্রায় ৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়।
চা বাগান অধ্যূষিত এই উপজেলার প্রায় চার লক্ষাধিক লোকের চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের লোকেরা সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন। তবে যথাযথ সেবা না পাওয়ায় অর্থ, সময় ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এক্সরে মেশিন পরিচালনায় রেডিওগ্রাফার ও ইসিজি মেশিন পরিচালনায় কার্ডিওগ্রাফার না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরেই কোনো পরীক্ষা নীরিক্ষা করানো যাচ্ছে না। ফলে হাসপাতালে আসা রোগীদের এক্সরে, ইসিজি পরীক্ষার প্রয়োজন হলে বাহির থেকে বাড়তি অর্থ খরচে করাতে হচ্ছে। এতে দূর দুরান্ত থেকে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা বঞ্চিত রয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, কিছুদিন চালু থাকলেও এনেস্থিসিয়া কনসালটেন্ট না থাকার কারনে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করার ফলে ওটির যন্ত্রপাতি বিকল হচ্ছে। টেকনিশিয়ান সংকটের কারণে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বাক্সবন্দি রয়েছে। যন্ত্রাংশগুলোও বিকল হওয়ার পথে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, গাইনি ও সার্জারী কনসালটেন্ট পেলে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা সম্ভব হত। অপারেশন থিয়েটার চালু করলে হাসপাতালের মধ্যে সিজার বা ছোট খাটো অপারেশন করা সম্ভব হতো।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ৫০ শয্যায় হাসপাতাল উন্নীত করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় জনবল পাইনি। ফলে বাধ্য হয়ে নিজেও রোগী দেখতে হচ্ছে। চাহিদা মতো জনবলের বিষয়টি উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে আশা করি অচিরেই জনবল পাওয়া যেতে পারে। জেলা প্রশাসক মহোদয় পরিদর্শনকালে কিছু ত্রুটি পেয়েছেন সেগুলোও সমাধান করা হবে।
আপনার মন্তব্য