নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ১৩:৩২

তদন্তে পুলিশ, তবু র‍্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সন্দেহভাজন নিহত

বাহুবলের ৪ শিশু হত্যা

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ৪ শিশু হত্যার দায়ে সন্দেহভাজন অটোরিকশা চালক চালক বাচ্চু মিয়া র‍্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। অথচ দেশব্যাপী আলোচিত এ ৪ শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত করছে পুলিশ। র‍্যাবের ওপর তদন্তভার দেওয়া না হলেও তারা 'ছায়া তদন্ত' করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে ওই শিশুদের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তিনি এ আশ্বাস দেন।

র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৯)-এর কোম্পানি কমান্ডার কাজী মনিরুজ্জামান দাবি করে বলেছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চুনারুঘাট দেওরগাছ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।   

তিনি বলেন, চার শিশু হত্যার আসামিদের ধরতে র‌্যাব সদস্যদের অভিযানের মধ্যে সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে বুধবার রাতে শাহেদ নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ জানায়, রাতেই দেওরগাছ এলাকা দিয়ে বাচ্চু ভারতে পালিয়ে যাবে। বিষয়টি জানার পর র‍্যাবের আরেকটি দল ওই এলাকায় অভিযানে যায়। র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে বাচ্চু ও তার লোকজন গুলি চালালে আমাদের দুই সদস্য আহত হন। তারা পাল্টা গুলি চালালে বাচ্চু মারা যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।”

পুলিশ বলে আসছে, পঞ্চায়েতের বিরোধের জেরে বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশুকে অপহরণ ও পরে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন বাচ্চু। তার অটোরিকশাও ওই ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এ ইউ শহিদুল ইসলাম শাহীন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন ''এই ঘটনা দু:খজনক। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযুক্ত আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে দোষী বলা যাবে না। আইনে উল্লেখ আছে অভিযুক্তকে 'নির্দোষ' ধরে নিয়ে বিচার কার্য পরিচালিত হয়। বিচারিক কার্যক্রম শেষে যদি সে দোষী সাব্যস্ত হয় তবে সুনির্দিষ্ট বিধি মোতাবেক তার শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার আদালতের।  এধরনের 'মিডিয়া ট্রায়াল'  বা ''পপুলার ট্রায়াল'  অনাকাঙ্ক্ষিত।

তবে শাহীন মনে করেন, মামলার কার্যক্রমে এ ঘটনার প্রভাব পড়া উচিত নয়।

বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, এ বিষয়টি তদন্ত বাধাগ্রস্ত করবে না।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে স্কুল নিখোঁজ হয় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়া তালুকদারের ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) এবং আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০)। পাঁচ দিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামের ঈসা বিল এলাকায় তাদের  বালিচাপা লাশ পাওয়া যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের পরিবারের বিরোধ দীর্ঘদিনের। মাসখানেক আগে সীমানা বিরোধ ও গাছ কাটা নিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে বিষয়টি সালিশেও গড়ায়।

পুলিশ লাশ উদ্ধারের দিনই এক পঞ্চায়েতের নেতা আব্দুল আলী বাগাল ও তার ছেলে জুয়েল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। পরে আব্দুল আলী বাগালের আরেক ছেলে রুবেল মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে বেরিয়ে আসতে থাকে তথ্য।  

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রুবেলের জবানবন্দির বরাত দিয়ে হবিগঞ্জের এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র সাংবাদিকদের বলেন, দুই পঞ্চায়েতের বিরোধ মেটাতে যে সালিশ বসেছিল, সেখানে বাগালের সমর্থক আরজু ও অটোরিকশা চালক বাচ্চু মিয়া ‘অপমানিত হওয়ায়’ তালুকদার পঞ্চায়েতের শিশুদের হত্যার পরিকল্পনা করে।

এরপর বাচ্চুর অটোরিকশা ব্যবহার করে গ্রাম থেকে চার শিশুকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং ওই রাতেই শ্বাসরোধে খুন করে লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয় বলে পুলিশের ভাষ্য।

বাচ্চুর অটোরিকশা, আরজুর বাড়ি থেকে কোদাল আর শাবল, কয়েকটি বস্তা এবং একটি রক্তমাখা পাঞ্জাবি উদ্ধারের কথাও সেদিন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

চাঞ্চল্যকর এ মামলায় এ পর্যন্ত ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। রুবেলের ভাই জুয়েল মিয়া এবং এ মামলায় গ্রেপ্তার আজিজুর রহমান আরজু মিয়াও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।  

আপনার মন্তব্য

আলোচিত