তপন কুমার দাস, বড়লেখা

২৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:৩৭

ইউপি নির্বাচন বড়লেখা : উৎসবের সাথে আছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

নিজবাহাদুরপুর, উত্তর শাহবাজপুর ও দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজলায় ভোটের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ভোটারদের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে শঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা আছে বড় একটি অংশের মধ্যে।

নির্বাচন বিষয়টি এদেশের আপামর জনগণের কাছে আনন্দ উচ্ছ্বাসের ব্যাপার। তা যদি হয়, তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচন, তাহলে একেবারে সোনায় সোহাগা। কিন্তু দলীয় প্রতীকে এবার তৃণমূলে ইউপি নির্বাচন হওয়াতে ইতোমধ্যে সামাজিক নিবিড় বাঁধনে চিড় ধরেছে। বর্তমান ইউপি নির্বাচনের পরিবেশগত বাস্তবতায় স্বদলীয় প্রার্থীদের মধ্যেও দা-কুমড়া সম্পর্ক বিরাজ করছে।

সরেজমিনে উপজেলার নিজ বাহাদুরপুর, উত্তর শাহবাজপুর ও দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ও স্থান ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে এমন ধারণাটি পাওয়া গেছে।

ভোটারদের শঙ্কার সাথে কিছুটা মিল পাওয়া গেল দ্বিতীয় ধাপে আগামী ৩১ মার্চের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অন্যান্য ইউনিয়নের মতো এ তিন ইউনিয়নের ২৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪টিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব কেন্দ্রে নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ও ভোট বাক্স ছিনতাইর আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রশাসন।

সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন এলাকা ঘুরবার সময় আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সাহাব উদ্দিনের কয়েকজন সমর্থককে পাওয়া গেল ঘোলষা এলাকায়। এসময় দলের বাইরে কেন সাহাব উদ্দিন প্রার্থী হলেন প্রশ্নটা ছুঁড়তেই মনে হলো মৌমাছির চাকে ঢিল পড়েছে। কে কার আগে উত্তরটা দিবেন এ নিয়ে একটা সোরগোল পড়ে গেল।

এ সময় ঘোলষা গ্রামের বাসিন্দা দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুর্শেদুজ্জামান সাদেক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সহাব উদ্দিন ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে উঠে আশা এ নেতাকে প্রার্থী নির্বাচনে সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ার পরও নৌকা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সাহাব ভাইয়ের সাথে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মী রয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি অবশ্যই পাশ করবেন।’

তার সাথে থাকা অনেকেই বললেন, ‘রাজনৈতিক দল যেমন সাধারণ মানুষের মনমর্জি বুঝতে পারে না বা চায় না। তেমনি দলে সাধারণ নেতাকর্মীকেও সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না।’

এই ইউনিয়নের তারাদরম এলাকায় পাওয়া গেল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সাহাব উদ্দিনকে। গণসংযোগ করছেন তিনি। সাহাব উদ্দিন ‘সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোরকে’ বলেন, ‘এটা আমার এলাকা (তাঁর বাড়ি এই এলাকাতে)। আমি একাই সবার বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে কথা বলছি। এখানে আর কাউকে সাথে নিইনি।’

তাঁর অভিযোগ, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা প্রচার করছেন ‘ভোট দিলেও পাশ, না দিলেও পাশ।’ ভোটের দিন সকাল ১১ টা পর্যন্ত ভোট যা হওয়ার হবে। এর পর থেকে কেন্দ্র বন্ধ করে ভোট দেওয়া হবে। পরে সব ভোট নৌকার হয়ে যাবে। এমন প্রচারণায় জনসাধারণ আতঙ্কে রয়েছেন। এই প্রার্থী বলেন, ‘আমার এখন একটাই চিন্তা সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ ও গণনা। এটা হলেই আমি বিপুল ভোটে পাশ করবো।’

‘ভোট দিলেও পাশ, না দিলেও পাশ’ এমন প্রচারণার বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটারও বললেন, এমনটা তাঁরা শুনছেন। এতে তাঁরা ভীতসন্ত্রস্ত্র। তাঁরা শুনেছেন, দুচারটা কেন্দ্র দখল হতে পারে। বোবারতল, মোহাম্মদনগর ও গ্রামতলাসহ কয়েকটি কেন্দ্র বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানালেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মতো বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ স্বপনেরও আশঙ্কা সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে। মোবাইল ফোনে কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, শোনেছেন গতকাল (২৭ মার্চ) নৌকার সমর্থকরা ছোটলেখা বাজারে ঘোষণা করেছেন, ভোটের দিন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সমর্থকরা নৌকার ব্যালটে প্রকাশ্যে সিল মারবেন। অন্য ভোট গোপন কক্ষে দেওয়া হবে। স্বপন বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হল আমি শতভাগ নিশ্চিত পাশ করবো।’

তবে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী নাহিদ আহমদ বাবলু (২৮ মার্চ) রাত সাড়ে ১১ টায় ‘সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোরকে’ নিজ দলীয় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ও বিএনপি প্রার্থীর এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘এসব প্রচারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার জনপ্রিয়তা দেখে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

বিকেলে তারাদরম বাজার থেকে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন এলাকায় যাবার সময় দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক কছরুজ্জামান  (৫০) বলেন, ‘গাড়ি চালাইয়া ভাত খাই। রাজনীতি করিনা। গাড়িত মাইনষে মাতামাতি করইন হুনি ঘোড়া-আর নৌকায় লড়াই অইবো। নিরপেক্ষ ভোট হলে শেষ পর্যন্ত ঘোড়া মার্কার প্রার্থী পাশ করতে পারে বলে তাঁর ধারনা।’

দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে সরেজমিনে উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর শাহবাজপুর ও নিজবাহাদুর ইউনিয়ন ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে ভোট উৎসবের সাথে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে শঙ্কার আভাস পাওয়া যায়।

(আগামীকাল পড়ুন বড়লেখা সদর ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের ভাবনা)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত