হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১২:৫৩

'পইলের মাটির একটি অংশ দিল্লিতেও আছে'

"আমরা দিল্লিতে থাকি। যদি কখনও কারোর দিল্লিতে যাওয়ার সুযোগ হয় তবে ভুলবেন না পইলের মাটির একটি অংশ দিল্লিতেও আছে। সম্পর্ক রাখবেন । নিঃসন্দেহে যোগাযোগ রাখবেন। এলাম, দেখলাম, জানলাম। আবারো আসব।" প্রায় তিন মিনিটের বক্তব্যে এ কথাই বলে গেলেন এই প্রথম পিতৃভূমি দেখতে আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপদেষ্টা ও ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট ফর ট্রান্সফারমিং ইন্ডিয়া (এনআইটিআই আইউগ) স্থায়ী সদস্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ গবেষক ডঃ বিবেক দেবরায়।

বেশ কড়াকড়ি নিরাপত্তা মধ্য দিয়ে ডঃ বিবেক স্ত্রী সুকন্যা মুখ্যার্জীকে নিয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টায় সদর উপজেলার পইল গ্রামে পৌছুলে তাকে বরণ করেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক, ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক সহ গ্রামের সকল পেশার মানুষ। স্থানীয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাকে এক নজর দেখতে রাস্তায় দাড়িয়ে স্বাগত জানায়।

স্থানীয় বিপিন চন্দ্র পাল পাঠাগার মিলনায়তনে পইল গ্রামবাসী তার সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্টানে তিনি আরো বলেন, ঢাকায় বহু আসা হয়েছে। ভবিষ্যতেও ঢাকা আসবো। এতোবছরেও পিতা - পিতামহের ভিটাস্থলে আসা হয়নি।এবার যখন ঠিক করে ফেলেছি পইলে যাব তখন জানতাম না গিয়ে কি দেখব। পইল সম্পর্কে বাবার কাছে শুনেছি । বাবা মাকে নিয়ে ৮৩ সালে একবার এসেছিলেন। বাবার কাছে একজনের নাম শুনেছি, তিনি হলেন তার এক সহপাঠি আব্দুল জব্বার (মরহুম সাবেক চেয়ারম্যান)।

তিনি বলেন, ঠাকুরদা রাজা রজনীকান্ত দেব ৪৭ সনে এদেশ থেকে ভারতে চলে যান।আমরা বড় হয়েছি ভারতে। আজ এই গ্রামের মানুষ আমাকে যে সম্মান দেখিয়েছেন তা অপ্রত্যাশিত। মনে মনে ভাবছিলাম খোজ করে বাড়ীটি দেখে যাব। কিন্তু আপনারাই আমার পিতৃভিটা বের করে রেখেছেন। তিনি এই গ্রামেরই আরেক কৃতি সন্তান বাগ্মীনেতা বিপিন চন্দ্র পালের লেখা বই ও তার লেখা প্রকাশিত বই পইল বিপিন চন্দ্র পাল পাঠাগারে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। বক্তৃতায় তিনি বাবার কাছ থেকে জানা পইল ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের নাম উল্লেখ করে বলেন ‘আইমু আবারও আইমু’।এ সময় উপস্থিত শ্রোতারা হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেন।

ভারতের পদ্মশ্রী পদক প্রাপ্ত বিবেক দেবরায় বলেন, সহজে আমার চোখে জল আসেনা। আজ আমি অভিভূত। অপ্রত্যাশিত জনসমাবেশ দেখে আমি আবেক আপ্লুত। আমার চোখের জল এসে গেছে। তিনি এই অনুষ্টান আয়োজনের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান মঈনুল হক আরিফসহ সকলের প্রশংসা করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হকের সভাপতিত্বে ও পইল ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল হকের পরিচালনায় ওই অনুষ্টানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মিসেস সুকন্যা মুখ্যার্জি, দ্যা এশিয়ান এইজের চেয়ারম্যান শোয়েব চৌধুরী , একই প্রতিষ্টানের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) শামীম চৌধুরী ও চিফ এডিটর জেসমিন চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সৈয়দ ইমামুল হক।

এ সময় পইল গ্রামের পক্ষ থেকে একটি ক্রেষ্ট তার হাতে তুলে দেন অনুষ্টানের সভাপতি সৈয়দ আহমদুল হক। বিপিন চন্দ্র পাল পাঠাগার, ডাঃ সৈয়দ আবরার জাবেরসহ বেশ কয়েকজন ব্যাক্তিগতভাবে তাকে বই ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, ডঃ বিবেক রায়ের বাবা বিমান বিহারী দেবরায় মেঘালয়ের অর্থ সচিব ছিলেন। পরে তিনি কেন্দ্রে বদলী হন। অনুষ্টান শেষে তিনি পায়ে হেঁটে পিতৃভিটায় যান। সেখানে তিনি কিছু সময় কাটান। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তার অনুভূতি সম্পর্কে বলেন আমি অভিভুত। তিনি বলেন বাড়িটি যেহেতু এখন আমার নয়। তাই যা কিছুই করি পইল গ্রামকে ঘিরেই করব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত