জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২০:৩৯

দুর্গা পূজা : বিশ্বনাথে বাকি কেবল ‘রঙতুলির আঁচড়’

মাটির কাজ শেষ করেছি। পূজার এখনও সপ্তাহ খানেক সময় হাতে আছে, শনিবার (১অক্টোবর) থেকে প্রতিমায় রঙের কাজ শুরু করবো।  সোমবারের (৩অক্টোবর) মধ্যে আমরা রঙের কাজ শেষ করতে পারবো। তাই ধীরে ধীরে কাজ করে যাচ্ছি। কথাগুলো সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের বাগিছা বাজারের কালিজুরি সার্বজনীন পূজা মন্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত মৌলভী বাজারের লামুয়া গ্রামের প্রতিমাশিল্পী ইংকু আচার্য ও লিপ্টন আচার্যের।

প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটের মৌলভী বাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পীরা বিশ্বনাথে এসে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। উপজেলার কোন কোন মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চললেও অন্যান্য কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আবার ২২টি সার্বজনীন পূজা মন্ডপের অধিকাংশ মন্ডপে প্রতিমায় রঙ দেয়া ছাড়া প্যান্ডেলসহ সকল প্রস্তূতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবছর উপজেলার ৮ইউনিয়নের মধ্যে ব্যক্তিগত ৩টি সার্বজনীন ২২টিসহ মোট ২৫টি পূজা মন্ডপ রয়েছে।

আগামি ৭অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী হিন্দুধর্মবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সারা দেশের ন্যায় সিলেটের বিশ্বনাথের মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত এখন শিল্পীরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিমা তৈরি করতে যেমন ব্যস্ত শিল্পীরা তেমনি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আয়োকরাও। সব মিলিয়ে দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে চলছে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক প্রস্তূতি। উপজেলার ২৫টি পূজামন্ডপে এখন প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কাজ শেষে কোন কোন মন্ডপের প্রতিমাগুলোকে যতœসহকারে রোদে শুকানো হচ্ছে। তবে প্রতিমা তৈরির সব প্রস্তূতি সম্পন্ন হলেও বাকি আছে কেবল শিল্পীদের রঙতুলির আঁচড়।

এদিকে বিশ্বনাথের ২৫টি মন্ডপের মধ্যে ঝুাঁকিপূর্নের (গুরুত্বপুর্ন) তালিকায় ১২টি মন্ডপ রয়েছে। এরমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ন (অধিক গুরুত্বপূর্ন) মন্ডপ রয়েছে ৮টি। এগুলো হচ্ছে দিঘলী শিব ও দূর্গাবাড়ি মন্দির, একতা যুবসংঘ দিঘলী, ত্রিনয়নী পূজা উদযাপন কমিটি চন্দ্রগ্রাম, শ্রীশ্রী বৃন্দাবন জিউর আখড়া বৈরাগী বাজার, বিশ্বনাথ পুরান বাজার, বিশ্বনাথ নতুন বাজারের জানাইয়া, কালাগিঞ্জ বাজারের কালিবাড়ী মন্দির এবং বাগিছা বাজারের কালিজুরি মন্ডপ।

তবে যেসব এলাকায় ঝুঁকিপূর্ন কিংবা গুরুত্বপুর্ন ও অধিক গুরুত্বপূর্ন মন্ডপ রয়েছে, সেসব এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সচেতন মহল তাদের সার্বক্ষনিক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন বলে জানালেন কালিজুরি গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা পূজা-উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত আচার্য এবং কালিজুরি বাগিছা-বাজার পূজামন্ডপের সভাপতি ককিল দাশ। তারা সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, যেখানে প্রতিমা তৈরী করা হচ্ছে সেখানে যাতে কোন দুস্কৃতিকারী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বাজার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় মুসলিম ভাইয়েরা সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। এমনকি কালিজুরি মন্ডপের পূজা প্রতিবছরই বাগিছা-বাজার সংলগ্ন খোলা-মাঠে উদযাপন করা হয়। সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ও বাজার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ সকল প্রকার সহযোগীতা করে থাকেন।

কালিগঞ্জ বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজী সৈয়দ আব্দুর রাজ্জাক, বাগিছা বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজাদ মিয়া বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এমনিতেই স্থানীয়ভাবে আমরা একে অপরকে সহযোগীতা করে থাকি। আর এটাতো হচ্ছে তাদের একটা ধর্মীয় প্রধান উৎসব। ফলে সফলভাবে পূজা উদযাপনে অতীতেও যেভাবে সহযোগীতা করেছি এবারও যতটুকু সহযোগীতা প্রয়োজন আমরা তা করে যাব।

এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বনাথ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম পিপিএম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরডটকমকে বলেন, প্রতিনিয়ত মন্ডপগুলোতে পুলিশি তৎপরতা জোরদার রয়েছে। আগামি ৬ অক্টোবর থেকে থানা পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়া সাদা পোষাকেও বিশ্বনাথের সর্বত্র পুলিশ মাঠে কাজ করবে বলেও জানান তিনি। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত