বড়লেখা প্রতিনিধি

৩০ নভেম্বর, ২০১৬ ১৯:৩৪

বড়লেখায় ভুয়া দাতা সাজিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করার চেষ্টা, দলিল জব্দ

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ভুয়া দাতা সাজিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন করার সময় ভুয়া বিক্রেতা, দাতা, গ্রহীতা ও সহযোগীসহ ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের মৃত আজমল আলীর ছেলে বিক্রেতা মতলিব আলী (৫৫), গ্রহীতা সামছুল হক (৬০) ও ভুয়া দাতা একই ইউনিয়নের ছমির উদ্দিনের স্ত্রী হাওয়ারুন নেছা (৬৫) ও সহযোগী শামীম আহমদের স্ত্রী হাজেরা বেগম (৩৫)।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে প্রকৃত দাতা সশরীরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে হাজির হওয়ায় দলিলটি জব্দ করেন সাব-রেজিস্টার আব্দুল করিম দলা মিয়া। আটককৃতদের পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দলিল জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হলে সাবরেজিস্ট্রার অফিস ও দলিল লেখক শেডে তোলপাড় শুরু হয়।

দাতা ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের বর্ণি মৌজার আরএস ৯৪৯ ও আরএস খতিয়ান ৩৫ দাগের সাড়ে ৪ শতক ভূমি একই ইউনিয়নের সামছুল হক ক্রয় করেন মুতলিবসহ ৬ জনের কাছ থেকে। বুধবার ভূমি রেজিস্ট্রি করার জন্য ক্রেতা সামছুল হক, বিক্রেতা মুতলিব ও দলিল লেখক আব্দুল হক যোগসাজেশ করে পৈত্রিক সম্পত্তির অংশীদার দাতাদের একজন (বিক্রেতার আপন বোন) নেওয়ারুন নেছাকে না জানিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের সাক্ষর ব্যতীত দলিলের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। জালিয়াতির এ কাজে তারা বর্ণি ইউনিয়নের ছমির উদ্দিনের স্ত্রী হাওয়ারুন নেছাকে নেওয়ারুন নেছা সাজিয়ে সাক্ষর নেন।

অন্যদিকে প্রকৃত দাতা নেওয়ারুন নেছা দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পৈত্রিক সম্পত্তির প্রকৃত শরিক নেওয়ারুন নেছার ছেলে সাবুল আহমদ খবর পেয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ মাকে নিয়ে সশরীরে হাজির হয়ে ভুয়া নেওয়ারুন নেছাকে সনাক্ত করেন। প্রকৃত নেওয়ারুন নেছা ও তাঁর ছেলে সাবুল আহমদের সনাক্ত মতে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম স্থগিত করে দলিলটি জব্দ করেন সাব-রেজিস্ট্রার।

প্রকৃত দাতা নেওয়ারুন নেছার ছেলে সাবুল আহমদ বলেন, ‘আমার মা দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। মাকে না জানিয়ে কৌশলে মায়ের ছবি সংগ্রহ করে ভুয়া দাতা সাজিয়ে আমার মামাসহ দলিল লেখক ভূমি রেজিস্ট্রির চেষ্টা করেন। আমি খবর পেয়ে মাকে নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।’

দলিল লেখক আব্দুল হক বলেন, ‘বর্ণি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি শাহাব উদ্দিন ভুয়া নেওয়ারুন নেছাকে প্রকৃত নেওয়ারুন নেছা হিসেবে সনাক্ত করায় আমি আর যাচাই ও ছবির সাথে মিলিয়ে দেখিনি।’

দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মীর মখলিছুর রহমান বলেন, ‘জাল জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মহোদয় দলিলটি জব্দ করেছেন। আমাদের সমিতি বৈঠক করে দলিল লেখক আব্দুল হকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

এ ব্যাপারে সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুল করিম দলা মিয়া বলেন, ‘জালিয়াতি চেষ্টার বিষয়টি অবগত হয়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি না করে জব্দ করেছি। এ ঘটনায় দলিল লেখকসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত