দেবকল্যান ধর বাপন

০৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:৪৩

অনুমতি ছাড়াই সুরমা থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, তীরে ভাঙ্গন

অনুমতি ছাড়াই সিলেটের সুরমা নদীর ভাঙ্গনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে নদীর দুই তীরে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পশ্চিমভাগ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে ড্রেজার দিয়ে এই বালু উত্তোলনের দৃশ্য। মেসার্স মাহমুদ তেজারতি সংস্থা নামের একটি প্রতিষ্ঠান চারটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানকে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এছাড়া পশ্চিমভাগ মৌজা থেকেও বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর পশ্চিমভাগ মৌজা এলাকাটি ভাঙ্গনের ঝুঁকিপূর্ণ। এই অঞ্চলে নদীর তীর সুরক্ষায় প্রায় তিনকোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি পরিদর্শনে গিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে দুই কিলোমিটার এলাকায় নদী ভাঙ্গনের প্রমাণ পেয়েছে।

ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোালনের ফলে নদী তীরবর্তী জনবসতি নদী গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এমন আশঙ্কা থেকে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, সুরমা নদীর সদর উপজেলার পেশনেওয়াজ মৌজার বালু মহালটি এবছর ইজারা পান মেসার্স মাহমুদ তেজারতি সংস্থার সত্ত্বাধিকারী মশউদ আহমদ। তবে গত কয়েকদিন ধরে তিনি এই মৌজার বাইরে পশ্চিমভাগ মৌজা থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন। আবার ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অনুমতি না থাকলেও তিনি চারটি ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করছেন।

এলাকাবাসী জানান, তাদের আবদনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। তবে কর্মকর্তা আসার খবর পেয়ে বালু উত্তোলনকারীরা ড্রেজার মেশিন আগেই সরিয়ে নেয়। কর্মকর্তা ফিরে গেলে ফের মেশিন এনে তারা বালু উত্তোলন শুরু করে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিলের অর্থায়নে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ২৭৫ মিটার নদী তীর প্রতিরক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে।

একদিকে নদী তীর প্রতিরক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে অন্যদিকে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী এলাকা আরো ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

মো. আবদুল্লাহ নামে পশ্চিমভাগ এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, জেলা প্রশাসনের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তিনি এই এলাকার বাড়িঘর ও ভিটে-মাটি রক্ষায় সুরমা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ দাবি করেন।

এ ব্যাপারে বালু উত্তোলনকারী মেসার্স মাহমুদ তেজারতি সংস্থার সত্ত্বাধিকারী মশউদ আহমদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বালু উত্তোলনকাজে নিয়োজিত এক শ্রমিকরাও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ এস এম ফেরদৌস বলেন, সুরমা নদীর পেশনেওয়াজ মৌজায় মেসার্স মাহমুদ তেজারতি সংস্থা নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বালু উত্তোলনের ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁকে কোন ড্রেজার মেশিনের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় নি।

তিনি আরো বলেন, এই প্রতিষ্ঠান ইজারাকৃত বালুমহাল ছাড়িয়ে আরেকটি মৌজায় এসে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি আমাদের অীফসের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন তবে তখন কোনো ড্রেজার মেশিন পাওয়া যায়নি।

তিনি আরো বলেন, তারপরও যদি ড্রেজার মেশিন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বালু উত্তোলনের ফলে নদীতীরে ভাঙ্গণ ধরার প্রমাণ পেয়েছি। তিনি বলেন, বালুমহাল ইজারা দেওয়ার পূর্বে নদীর সমস্যা ও সম্ভব্যতা যাচাইকল্পে বিশেষজ্ঞ মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত