নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:২৪

তিন ঘন্টার মধ্যে বহিস্কার, ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্থগিত

প্রায় ২৭ মাস পর দায়িত্ব নেওয়ার তিন ঘন্টার মধ্যে রোববার দুপুরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিলো স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়। তবে মন্ত্রনালয়ের এই আদেশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্থগিত করেছে উচ্চ আদালত।

বরখাস্তের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর দায়ের করা একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার দুপুরে এ আদেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আরিফুল হক চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ হালিম মোহাম্মদ কাফি এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, এখন আরিফের মেয়রের দায়িত্ব নিতে কোনো বাধা নেই।

বহিস্কারাদেশ স্থগিত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নানা নাটক সাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এসব জনগনের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র। এই নাটক বন্ধ করতে হবে। জনগনের ম্যান্ডেটকে অবজ্ঞা করে কিছু করা চলবে না।

সবার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে জানিয়ে আরিফুল হক, দ্রুতই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে জানান।

একটি মামলার সাময়িক বহিস্কৃত থাকার ২৭ মাস পর আদালতের নির্দেশে গত রোববার বেলা ১১টায় নগর ভবনে গিয়ে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আরিফ। এর ঘন্টা তিনেক পর দুপুর ২টায় তাঁকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ সম্বলিত স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি সিলেট সিটি কর্পোরেশনে এসে পৌঁছায়।

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমাবেশে বোমা হামলার মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ায় তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় বলে রোববারের চিঠিতে জানান মন্ত্রণালয়। ২০১৩ সালের ১৫ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ময়ের নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী প্রায় ২৭ মাস দায়িত্বের বাইরে ছিলেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশীটে নাম আসায় ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারী তাকে সাময়িক বহিস্কার করে মন্ত্রনালয়।

২০০৪ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের সুরঞ্জিতের সমাবেশে বোমা হামলায় এক যুবলীগ নেতা মারা যান। এ ঘটনার ১২ বছর পর আরিফুল হককে অভিযুক্ত করে সম্পূরক চার্জশীট দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। গত ২২ মার্চ এই চার্জশীট আমলে নেয় আদালত।

আর ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ওই হত্যাকান্ডের প্রায় ১০ বছর পর তৃতীয় সম্পূরক চার্জশিটে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আসামি করা হয়। এই মামলায় ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকেই কারাবন্দি ছিলেন আরিফ।

গত ৪ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট মামলা করেন। গত ১২ মার্চ উচ্চ আদালত তাঁর আগের বহিস্কারাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করলেও তা খারিজ করে দেন আদালত। গত ২৯ মার্চ আরিফকে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়।

এই চিঠি পেয়ে রোববার সকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আরিফুল হক চৌধুরী। এর তিনঘন্টা পর আরেক মামলায় তাকে সাময়িক বহিস্কার করে মন্ত্রনালয়। যা সোমবার স্থগিত করে আদালত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত