নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ এপ্রিল, ২০১৭ ০১:০৪

‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ থেকে ‘আতিয়া মহল’

২০০৬ সালের পর ২০১৭। এগারো বছরের ব্যবধানে জঙ্গি আস্তানা হিসেবে দেশজুড়ে আলোচনায় সিলেটের দুটি বাড়ি। এর একটির নাম ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ অপরটির নাম ‘আতিয়া মহল’।

২০০৬ সালের ২ মার্চ সূর্যদীঘল বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমানকে। আর গত ২৪ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত পাঁচদিন আতিয়া মহলে অভিযানে নিহত হয় চার জঙ্গি। যাদের মধ্যে নব্য জেএমবির প্রধান মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।  

জঙ্গি আস্তানা হিসেবে সিলেট প্রথম আলোচনায় আসে ২০০৬ সালে। ওই বছরের ১ মার্চ মধ্যরাতে সিলেটের উত্তরপ্রান্ত শাপলাবাগ এলাকার ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ নামের একটি একতলা বাড়িতে জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ  (জেএমবি’র) শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান রয়েছেন সংবাদে বাড়িটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর একটি দলও অংশ নেয় এই অভিযানে। বাড়ির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া হয়। ভিতরে ছোড়া হয় গ্যাস। ২ মার্চ সকালে বাড়িটি থেকে বেরিয়ে আসেন শায়খ রহমানের স্ত্রী-সন্তানরা। এরপর আত্মসমর্পণ করেন আবদুর রহমানও। তাকে আটকের পর সূর্যদীঘল বাড়ি থেকে ছোট আকারের একটি বোমা, দুই কেজি অ্যালুমিনিয়াম, কয়েকটি বই, ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও পারিবারিক ছবি উদ্ধার করা হয়। ২০০৭ সালে ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় ফাঁসি হয় আবদুর রহমানের।

গত শনিবার শাপলাবাগ এলাকার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখন বাড়ির মালিক নিজেই থাকেন বাড়িটিতে। আব্দর রহমান আটক হওয়ার পর আর কাউকে ভাড়া দেওয়া হয়নি। বাড়ির মালিক লন্ডন প্রবাসী আব্দুল হক বলেন, আমি দেশে আসলে নিজেই এই বাড়িতে থাকি। আর যুক্তরাজ্য চলে গেলে তালাবদ্ধ থাকে। বাড়িটি আর ভাড়া দেইনি। একজন তত্ত্বাবধায়ক তখন বাড়িটির দেখাশোনা করেন। আব্দুর রহমানকে ধরার পর ৯ মাস বাড়ির চাবি পুলিশের কাছেই ছিলো বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, অব্দুর রহমানকে ধরতে অভিযানের সময় বাসার ছাদসহ বেশকিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। পরে তা সংস্কার করা হয়েছে।

সেই ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’র কথা এগারো বছর পর আবার মনে করিয়ে দিলো নগরীর দক্ষিণ পাড়ের শিববাড়ি এলাকার ‘আতিয়া মহল’ নামের আরেকটি ভবন। জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত ২৩ মার্চ মধ্যরাত থেকে পাঁচতলা এই বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ। ২৪ মার্চ বিকেলে পুলিশের সাথে যোগ দেয় সোয়াট। রাতে আসে সেনাবাহিনী। ২৫ মার্চ সকাল থেকে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। ২৮ মার্চ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চার জঙ্গির নিহতের খবর জানায় সেনাবাহিনী। ওই ভবনে অভিযান চলাকালে গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ভবনের বাইরে দুটি বোমা বিস্ফোরণে এক র্যাব ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হন সাত জন।

আতিয়া মহলের সত্ত্বাধিকারী উস্তার মিয়া জানান, ‘ভবনটি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। আমাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।’

সূর্যদীঘল বাড়িতে অভিযানের ৩১ ঘন্টার মধ্যেই শীর্ষ জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমানকে দুই সহযোগীসহ আত্মসমর্পন করাতে সমর্থ হয়েছিলো আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তবে আতিয়া মহলের ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার আত্মসমর্পনের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও ভেতরের জঙ্গিরা তাতে সাড়া দেয়নি। অবশেষে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের ১১১ ঘন্টার টানা অভিযান শেষে জানানো হয় চার জঙ্গির নিহতের খবর।

এখনো ওই ভবনে বোমা নিষ্ক্রিয়করণের কাজ চলছে। মঙ্গলবারও এই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি হ্যান্ড গ্রেণেড।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত