সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ অক্টোবর, ২০১৭ ১৭:০১

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে সিলেটে মানববন্ধন

চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছরে উন্নীত করণের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ সিলেটের সিনিয়র সভাপতি নিলয় গোস্বামীর সভাপতিত্বে ও নিরূপম কান্ত দাস অলকের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন এম মিজান, শ্রীপদ দাস, উত্তম ভট্টাচার্য, জয়ন্ত লাল তালুকদার, শাহিদুর রহমান ওয়াসিম, বিমল দে, সঞ্জয় চৌধুরী, ঝুটন পাল, জামিল আহম্মদ, নিলয় ভদ্র, পুলক দাস, অলক দাস, রতন, ফরিদ উদ্দিন, সঞ্জয়, জীবন, রনি চৌধুরী, পল্লব ভট্টাচার্য, জীবন কৃষ্ণ সরকার, রাসেদ খান, সৈয়দ কবির, রাশেদুল ইসলাম, মাহাবুব রহমান, জলি আক্তার, পার্থ সারথি দাস, আয়ন দাস, নুর আলম, অজয় গোলা রতন, সেলিম উদ্দিন, স্বপন মিয়া, রফিকুল ইসলাম ফারুক, অমর রঞ্জন দাস, রাহাত চৌধুরী, মিনাল ভৌমিক, মুনশি আলিম, ফজলুল হক, রাত্রি পারুল, হেলেনা আক্তার, অনামিকা, শিবিক্ষর আহমদ, অদিতি ভট্টচার্য, ফয়জুল আহমদ, শরিফ তালুকদার, রঘুনাথ, কৃষ্ণ দাস, তানভিন সুইটি, রাত্রি, পারুল, অজিত চন্দ্র।

এ সময় সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী  শাহনাজ পারভিন জলি বলেন, বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্পিকার থাকা অবস্থায় ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি মহান জাতীয় সংসদে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে; যুব সমাজ আশার আলো দেখে। তাই আর দেরি না করে সরকারকে দ্রুত চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে উপস্থিত এমসি কলেজের ছাত্র পুলক দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে উল্লেখ করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২১তম বৈঠকে ৩২ বছর করার সুপারিশ করেন। নবম জাতীয় সংসদে ১৪তম অধিবেশনে ৩৫ বছর এই প্রস্তাবটি প্রথম প্রস্তাব হিসেবে গৃহীত হয়। সেই সাথে বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী এ দাবি বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ বছর ধরে অকাট্য যুক্তি তুলে ধরে অহিংস পদ্ধতিতে আন্দোলন করে আসছে। ৩৯তম বিসিএস সার্কুলারের আগেই এর বাস্তবায়ন চাই।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সিলেট বিভাগীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি নিলয় গোস্বামী উল্লেখ করেন, গড় আয়ু যখন ৪৫ ছিল তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭, যখন ৫০ ছাড়ালো তখন প্রবেশের বয়স ৩০ হলো। বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ বছর হলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স এখন কত হওয়া উচিত? ১৬ বছর ২ মাসে এস.এস.সি ১৮ বছর ৪ মাসে এইচ.এস.সি ও ১৮ বছর ১০ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলে ১৯ বছর বয়সে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করলে ২৩ বছর বয়সের পূর্বে কখনো অনার্স শেষ করা সম্ভব না। তাহলে কোন যুক্তিতে চাকরির আবেদনের শুরুর বয়স ২১ থাকবে? কেন এই অকার্যকর আইন এখনো প্রয়োগ করে ছাত্র সমাজকে চরমভাবে ঠকানো হচ্ছে ?

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র রাহুল দাস বলেন, সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে জনবল (অভিজ্ঞতা ছাড়া) নিয়োগ দেয় না। ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রেও কর্মের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে; তাই চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর করা দরকার।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সবুজ ভূঁইয়া বলেন, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য চাকুরীতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা প্রয়োজন। কারণ উন্নত বিশ্বকে আমরা অনুসরণ করে শিক্ষা , চিকিৎসা, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। তদ্রূপ চাকুরীতে প্রবেশের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করে দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করতে পারি। উন্নত বিশ্বে কোথাও চাকুরীতে প্রবেশের বয়স ৩০ নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ভারতে ৩৯, শ্রীলংকায় ৪৫, মালয়েশিয়ায় ৩৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৫, সিঙ্গাপুরে ৪০, সুইডেনে ৪৭, কাতারে ৩৫, নরওয়েতে ৩৫, ফ্রান্স ৪০, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯, কানাডায় ৫৯, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪০ এবং আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে চাকুরীতে প্রবেশের নির্দিষ্ট কোন বয়স সীমা নেই, শুধু অবসরের আছে।

সাধারণ ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম সেলিম, প্রতিবাদ করে উল্লেখ করেন বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে যুব সমাজকে কাজে লাগাতে হবে। বৃদ্ধদের নয়। যুবনীতি ২০১৭ তে বলা হয়েছে নতুন যুবনীতিতে যুবকদের বয়স আগের মতো ১৮-৩৫ বছর রাখা হয়েছে। যে দেশে মানুষের গড় আয়ু ৭২, সেখানে ৩০ এ কিভাবে পৌঢ় হয়! বরং ৩০-৪০ হচ্ছে মানুষের পরিপূর্ণ যৌবন অর্থাৎ সুবর্ণ সময় যা কর্মক্ষেত্রে লাগানোর উপযুক্ত সময়। যারা বলছেন ৩০ এর পর মানুষ বুড়ো হয় তাদের এই মতবাদ যুবনীতি অনুসারে ভ্রান্ত। গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টটল বলেছেন ৩০ বছর পর্যন্ত মানুষ শুধু পড়াশোনা করবে এবং ৩০ এর পর তাকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে ২১ বছর বয়সে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা যেত। কারণ তখন ডিগ্রি পাস কোর্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্ত বর্তমানে পাস কোর্স ডিগ্রিধারীদের উক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কোন বিধান নেই। তাকে অবশ্যই মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করার পর বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হয়। বর্তমান ডিগ্রি পাস কোর্স ৩ বছর মেয়াদী যা পূর্বে ২ বছর মেয়াদী। আর পাস কোর্স ডিগ্রিধারীর জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি ২ বছর মেয়াদী।তাহলে দেখা যায় পাস কোর্স ডিগ্রিধারীর জন্য সেশন জোট ছাড়াই মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে ন্যূনতম ৬ বছর সময় লাগবে। তাই দেখা যায় পাস কোর্স ডিগ্রি ধারী শিক্ষার্থীর ডিগ্রি অর্জন করার পর তার বয়স সর্বনিম্ন বয়স দাড়ায় ২৫ বছর । তাহলে কোন আইনে বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের বয়স ২১ হয়? আর এই অকার্যকর আইনটি সংশোধন করলেই চাকুরীতে প্রবেশের বয়স ৩৫ এমনিতেই হয়। এখানে কোন আন্দোলনের প্রয়োজন হয় না।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি মিজান খানের ভাষ্য মতে, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য সরকার সহ সকল ছাত্র ও অভিভাবক সহ সকলকে আমরা জানিয়েছি। কিন্তু সরকারের এ বিষয়টি নির্বাক ভূমিকা সব সময় আমাদের হতবাক করেছে। সংসদের সামনের অধিবেশনে চাকরিতে প্রবেশের বয়সমীমা ৩৫ বছর করা নিয়ে ইতিবাচক ভূমিকায় না আসলে আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে বিকল্প পথ খুঁজে নেবো।

তিনি আরো বলেন, আমরা কর্মসূচী শেষে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বাড়িতে স্মারকলিপি পৌঁছে দিবো, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার ব্যাপারে সিলেটের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষ থেকে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ভূমিকা চাই। আমরা আশা করছি উনি এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। আমরা গতকাল জাফর ইকবাল স্যারের বাসায় দেখা করার জন্য গিয়েছিলাম কিন্তু উনাকে বাসায় উপস্থিত পাইনি। কিন্তু উনার বাসায় আমরা স্মারকলিপি রেখে আসছি আশা করছি উনিও চাকরির বয়স ৩৫ করার ব্যাপারে ভূমিকা রাখবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত