নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ মার্চ, ২০১৮ ১২:৪৭

এক বছর ধরে হামলার পরিকল্পনায় ছিল ফয়জুর

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর রহমান ফয়জুল কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত নন এবং নিজে নিজেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে। জাফর ইকবালকে হত্যার লক্ষ্যে এক বছর ধরে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সে। নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়াআসা করত।

গত এক বছর ধরে জাফর ইকবাল কখন কোথায় যেতেন সে বিষয়ে খোঁজ রাখত সে। তবে খোঁজ রাখার কাজে কারও সহযোগিতা নিয়েছেন কি না, সে প্রশ্ন করলেই চুপ করে থাকছে ফয়জুর। তার শারীরিক অবস্থার কারণে এখন খুব জোরালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদও করা যাচ্ছে না।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৩ মার্চ) বেলা তিনটা থেকে শুরু হওয়া ‘রোবো কমব্যাট’ প্রতিযোগিতায় জাফর ইকবালের থাকার সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত ছিল না। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুদিনব্যাপী ‘সাস্ট ট্রিপল ই ফেস্টিভ্যাল ২০১৮’-এর সকাল ও সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন এমনটাই জানিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী তিনি শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে পৌঁছান। দুপুরের খাবারের বিরতির পর তিনি বেলা তিনটায় মুক্তমঞ্চে অতিথিদের জন্য নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসেন।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখেছে, ওই দিন ফয়জুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে সকাল ৯টার দিকে সাইকেলে করে ঢুকে। এরপর সাত মিনিট পর্যন্ত তাকে দেখা গেছে। সাত মিনিটের মাথায় তার অবস্থান ছিল প্রধান ফটক থেকে দেড় কিলোমিটার ভেতরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা একাত্তর ভাস্কর্যের কাছে। বেলা তিনটার পর ফয়জুরকে দেখা গেছে মুক্তমঞ্চে মুহম্মদ জাফর ইকবালের পেছনে। মাঝের সময়টায় ফয়জুর কোথায় ছিল, সেটা জানা যায়নি। চেতনা একাত্তর থেকে মুক্তমঞ্চের দূরত্ব আনুমানিক দেড় শ গজ।

তবে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফয়জুর পুলিশকে বলেছেন, তিনি ওই দিন দুবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন। সেটা কখন কখন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেনি।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল মাস তিনেক আগে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন। এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের দেয়ালে ক্লাস রুটিন টাঙানো থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সহকর্মী, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই তাঁর দিনলিপি সম্পর্কে মোটামুটি ওয়াকিবহাল।

প্রশ্ন উঠেছে ঘটনার দিন ফয়জুরের পোশাক নিয়েও। ফয়জুরের পরনে কালো টি-শার্ট ও ছাইরঙা জিনস ছিল। উৎসবে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের গায়েও একই রঙের টি-শার্ট ছিল। ওই উৎসবে খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিলেটের লিডিং, নর্থ ইস্ট ও মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ছিলেন। সবার গায়ে একই রঙের টি-শার্ট ছিল। উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের আলাদা পরিচয়পত্র ছিল না। ফলে ফয়জুরকে দেখে কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগেনি। তবে ওই দিন কীভাবে শিক্ষার্থীদের পরনে থাকা টি-শার্ট ফয়জুরও পেল এনিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র গ্রেপ্তার হয়েছেন। শাবিপ্রবির একাধিক ছাত্র জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে থাকার তথ্য বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমেও এসেছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত