নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ জুন, ২০১৮ ১৯:১৮

এমপি মানিকের মদদে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুককে হত্যা!

সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পরিবারের অভিযোগ

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার উত্তর খুমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদকে স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের মদদে তার চাচাতো ভাই ইউপি চেয়ারম্যান বিলাল আহমদ ও তার সহযোগীরা খুন করে বলে দাবি করেছেন ফারুকের স্ত্রী রেহেনা বেগম।

শনিবার (৩০ জুন) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

এ ব্যাপারে এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমার বিরুদ্ধে করা এ অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা। আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আমার দলের কর্মী। আমি এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ফারুক হত্যাকান্ডে যারা জড়িত আমি তাদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করতে ফারুকের স্ত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপও কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে রেহেনা থানা পুলিশের মামলা না নেওয়া ও স্থানীয় বিরোধের কারণে তার স্বামীকে যে খুন করা হয় সে বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তাঁর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে নিহত ফারুকের ভাতিজা মেডিকেল কলেজ ছাত্র বায়জিদ আলম।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ তিনি করেন, ২২ জুন দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে তার স্বামীকে হত্যা করে বিলের পানিতে লাশ গুম করে রাখে। ফারুক ব্যবসার পাশাপাশি তৃণমূল আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী একজন মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। নিখোঁজ হওয়ার পর পাতলাচুরা বিলের পাড়ে তার পরনের জামাকাপড় পাওয়া যায়। ২৩ জুন লাশের অনুসন্ধান করে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল লাশের সন্ধান করে ব্যর্থ হয়। পরদিন ২৪ জুন পাতলাচুরা বিলে তার লাশের সন্ধান মিলে। লাশের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও গলাকাটা ছিল। লাশ গুম করতে লাশের গলায় ইট বেঁধে পানিতে ফেলে রাখে খুনিরা।

বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ও পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় পর্যায়ে অন্যায় ও নানা অপকর্মের রাজত্ব কায়েম করেছেন তারই চাচাতো ভাই উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিলাল আহমদ। বিলালের সাথে নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার স্বামীর দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিলালের নানা অন্যায় ও অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করায় সে আমার স্বামীর উপর ক্ষিপ্ত ছিল। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে থাকলেও বিলালের অন্যায় কাজে কোনোদিন প্রশ্রয় দেননি।’

স্বামীর হত্যার পেছনে এমপির মদদ রয়েছে উল্লেখ করে রেহেনা জানান, তাঁর স্বামীর নৃশংস এই খুনের ঘটনায় এমপি মানিকের সমর্থনপুষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বিলাল ও তার সহযোগীরা জড়িত। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলে এর সত্যতা অবশ্যই বেরিয়ে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, হত্যার ঘটনায় তিনি ২৫ জুন সন্ধ্যায় ইউপি বিলাল আহমদ ও তার ১০/১২ জন সহযোগীকে আসামি করে ছাতক থানায় এজাহার দেন। পুলিশ তা গ্রহণ করে কপিও দেয়। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় মামলা রেকর্ড না করে এজাহার রিসিভ কপিতে ঘষামাজা করে ফেরত দেয় পুলিশ। এমনকি একই তারিখ দেখিয়ে এসআই অরুপ সাগর কমল গুপ্ত বাদী বানিয়ে থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করানো হয়। যার জিআর নং-১৮০/১৮।

ফলে তিনি বাধ্য হয়ে ২৭ জুন সুনামগঞ্জ আমল গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। ২৮ জুন আদালত তার দায়ের করা মামলাটি পুলিশের দায়ের করা মামলার সাথে সংযুক্ত করে পদক্ষেপ নিতে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন এবং আগামী ৮ জুলাইর মধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করারও নির্দেশ দেন। আদালত তার নির্দেশে থানা পুলিশের দায়ের করা মামলাটি যে আইনত হয়নি তাও উল্লেখ করেন।

রেহেনা বেগম দাবি করেন, তার এজাহারটি না নিয়ে যে অজ্ঞাতনামা আসামি করে যে মামলা করা হয় তা খুনিদের রক্ষার জন্যই করা হয়েছে। পুলিশের অতি উৎসাহীতে মনে হচ্ছে মায়ের চেয়ে মাসির দরদই বেশি। তারা জজ মিয়া নাটক সাজানোর জন্যই এমপির ইশারায় মামলা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত ফারুকের শিশু সন্তান ইয়াছিন আহমদ, মেয়ে আরিফা ও জেনিফা, ভাই আতিক মিয়া, মানিক মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত