সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ১৬:২২

যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে সিলেট ও চট্টগ্রাম চেম্বার

সিলেট এবং চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য যৌথ উদ্যোগে কাজ করার জন্য সম্মত হয়েছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। সেই সাথে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রেল, মহাসড়ক ও বিমানের ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট যৌথভাবে দাবী জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উভয় চেম্বারের নেতৃবৃন্দ।

শনিবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় সিলেট চেম্বারের কনফারেন্স হলে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র যৌথ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় বলা হয়, সিলেট এবং চট্টগ্রামের মধ্যে ভৌগলিক, সামাজিক এবং ব্যবসায়ীক যে সম্পর্ক রয়েছে তা কাজে লাগিয়ে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করলে সবক্ষেত্রে সাফল্যের দ্বার আরো উন্মোচিত হবে।

যৌথ সভায় সিলেট চেম্বারের পক্ষে সভাপতিত্ব করেন সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ এবং চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পক্ষে নেতৃত্ব দেন চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম।

সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বক্তব্যে ড. মোমেন বলেন, সিলেট এবং চট্টগ্রামের মধ্যে সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ উন্নত করলে পর্যটন শিল্প, আইটি সেক্টর সহ বিভিন্ন খাতে শিল্পোদ্যোক্তারা লাভবান হবেন। তিনি বলেন, সিলেট ডিজিটাল সিটি’র মতো চট্টগ্রাম সিটিকে কিভাবে ডিজিটাল সিটিতে রূপান্তরিত করা যায় এজন্য আমরা সিটি মেয়রকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।

তিনি বলেন, সিলেট ও চট্টগ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। সিলেট এয়ারপোর্টের জন্য বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তা বাস্তবায়িত হলে বর্তমান এয়ারপোর্ট চারগুণ বৃদ্ধি পাবে। তিনি গ্যাস সমস্যা সমাধানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সরকার বাসা-বাড়িতে কোনভাবেই গ্যাস দিতে রাজি নয়, তবে শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস দিতে রাজি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি উভয় চেম্বার নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।

চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম তার বক্তব্যে বলেন, ১২ আউলিয়ার দেশ চট্টগ্রামের সাথে শাহজালাল (রহঃ) এর পুণ্যভূমি ৩৬০ আউলিয়ার দেশের মানুষের একটি আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। সামাজিক, ধর্মীয় ও আচার-আচরণের দিক দিয়ে সিলেট এবং চট্টগ্রামের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। কমিটমেন্টের দিক দিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেটের মানুষ যেমন দৃঢ়চেতা তেমনিভাবে এ দু-অঞ্চলের মানুষের মনও অনেক বড়। তিনি বলেন, আমার শুনে ভালো লেগেছে সিলেটে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ও শান্তিতে ব্যবসা করছেন, যেখানে তারা চাঁদাবাজি ও কোন ধরণের হয়রানির শিকার হচ্ছেন না, এটি খুবই ইতিবাচক দিক।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সিলেট চেম্বারের বুথ খোলার প্রস্তাব করে বলেন, সেখানে বিনা ভাড়ায় আপনাদের জন্য স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সিলেটে এখনও পর্যাপ্ত গ্যাস রয়েছে, কি কারণে তা গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে না তা আমি বুঝতে পারছিনা। শুধুমাত্র গ্যাসের কারণে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে না এবং অনেকেই ব্যাংক ডিফল্টার হয়েছেন। তিনি সিলেট এবং চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ইউএস বাংলা ও রিজেন্ট এয়ারের সিলেট-চট্টগ্রাম ফ্লাইট একমাসের মধ্যে চালুর দাবী জানান। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প স্থাপনে যেকোনো সমস্যা সমাধানে যৌথভাবে সরকারের নিকট দাবী জানানোর প্রস্তাব করেন।     

সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম জেলা, ১২ আউলিয়ার দেশ ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাথে সিলেটের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। গত ৫০-৬০ বছরের এই পুরনো সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে, সমুদ্র বন্দরের ব্যবহারকে সহজতর করতে অন্যান্য জায়গার যেভাবে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেই একই ভাবে চট্টগ্রাম-সিলেটের যোগাযোগ বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। চট্টগ্রাম ও সিলেটের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে। কিন্তু সিলেট ও চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এই সম্পর্ক দিন দিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তিনি সিলেটের সাথে চট্টগ্রামে সম্পর্ক সুদৃঢ় করণের লক্ষ্যে রেলসেবার মান উন্নয়ন, শ্রীমঙ্গলে প্রতিষ্ঠিত ২য় চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, প্রবাসী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে সিলেট-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে বিলাসবহুল, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন এসি কোচ সংযোজন, সিলেট-চট্টগ্রাম রেল লাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তর এবং যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি, শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন এবং সিলেট ইলেকট্রনিক্স সিটিতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্টকরণের লক্ষ্যে সিলেট-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু, সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংস্কার এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এর সাথে দুটি পৃথক সাক্ষাতের মাধ্যমে এ বিষয়টি তুলে ধরি এবং পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিলেট-চট্রগ্রাম রুটে পাহাড়িকা ও উদয়ন ট্রেনে ২টি এসি কেবিন ও ১টি এসি বগি সংযোজনের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ট্রেন এর কাজে দ্রুত বাস্তবায়ন এর অনুরোধ জানান। তাছাড়াও তিনি সিলেট চেম্বারের দাবীর প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের ন্যায় সিলেটে শ্রম আদালত স্থাপনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং সিলেট চেম্বারের সার্বিক কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। সিলেটের সাথে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চিটাগাং চেম্বারের সাথে এক যোগে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের জন্য সিলেট চেম্বারে একটি সেল খোলার প্রস্তাব করেন।

এসময় বক্তব্য রাখেন র‌্যাব-৯, সিলেটের অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ,  সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি মাসুদ আহমদ চৌধুরী, পরিচালক মো. হিজকিল গুলজার, জিয়াউল হক, পিন্টু চক্রবর্তী, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, চট্টগ্রাম সমিতি সিলেটের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, লুব-রিফ বাংলাদেশ লি. এর পরিচালক সালাউদ্দিন ইউসুফ, ফুলকলির ডিজিএম মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার, ওয়েল ফুডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হাবিবুর রহমান, লংকা-বাংলা সিকিউরিটিজের সিলেট ইনচার্জ মো. শামছুদ্দিন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. ছানাউর।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বারের সহ সভাপতি মো. এমদাদ হোসেন, পরিচালক মো. সাহিদুর রহমান, নুরুল ইসলাম, মো. ওয়াহিদুজ্জামান (ভূট্টো), এহতেশামুল হক চৌধুরী, মুকির হোসেন চৌধুরী, আব্দুর রহমান, মো. আব্দুর রহমান জামিল, হুমায়ুন আহমেদ, মুজিবুর রহমান মিন্টু, সদস্য এম. এ. হান্নান সেলিম, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, মো. সাহাব উদ্দিন, আবেদুজ্জামান, ধ্রুব দাস, এহসানুল কবির, জাবেদ সিরাজ, মো. আব্দুল হক, নাজিম উদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, এম. রফিকুল আলম, মো. সাইফুদ্দিন চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন সেলিম, রাহাত তফাদার ও চিটাগাং ও সিলেট চেম্বারের কর্মকর্তাবৃন্দ।       

আপনার মন্তব্য

আলোচিত