নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:১৯

নগরীর অবৈধ গ্যাস ও অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসার বিরুদ্ধে শুরু হচ্ছে অভিযান

সিলেট নগরের আবাসিক এলাকাগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলছে গ্যাস ও অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসা। অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্র গ্যাস ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের দোকান খুলে বসায় বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

শুক্রবার নগরের বাগবাড়ি এলাকার এমন একটি দোকান থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়িতে তোলার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আহত হন দুই সাংবাদিক। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি অটোরিকশা।

এঘটনার পর রাতে ওই গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানটি পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক।

এদিকে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা গ্যাস ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের দোকানের বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযানে নামার কথা জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসক সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে আর ছাড় দেওয়া যাবে না। আবাসিক এলাকায় এভাবে গ্যাস ও অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসা করে সাধারণ মানুষজনকে ঝুঁকির মধ্যে রাখা যাবে না। দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে জেলা প্রশাসন থেকে।

তিনি বলেন, আমরা এর আগেও উদ্যোগ নিয়েছি অভিযানের কিন্তু বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা সিলেটে নিয়মিত থাকছেন না। তাই দেরি হচ্ছে। তবে এখন আর বসে থাকা যাবে না। আমি দ্রুত সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

জানা যায়, শুক্রবার নগরের বাগবাড়ি এলাকায় একটি গুদাম থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়িতে তোলার সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়ে পাশে থাকা একটি সিএনজি অটোরিকশা ভেদ করে প্রায় ১০০ গজ দূরে দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে আঘাত করে। এসময় বিকট শব্দ শুনে ও সিলিন্ডারের আঘাতে দুমরে মুচরে যাওয়া সিএনজি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পরেন এলাকাবাসী। এসময় ওই এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এই গুদাম সরানোর দাবি তুলেন।

এ ঘটনায় আহত মোটরসাইকেল আরোহী চ্যানেল২৪-এর সিলেট ব্যুরো প্রধান গোলজার আহমেদ ও ভোরের কাগজ'র ফটোসাংবাদিক অসমিত অভি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সিলিন্ডার গ্যাস বা ওই জাতীয় কোনো বস্তু আবাসিক এলাকা বা মার্কেটে বিক্রি করা যায় না। গ্যাস সিলিন্ডার রোদে না রাখা, নিরাপদ দূরতে সিলিন্ডার মজুদ করা, উপর থেকে সিলিন্ডার নিচে না ফেলার নির্দেশনাও রয়েছে। এছাড়াও এই সিলিন্ডার বিক্রি করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিতে হয়। এমনকি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারেও নিয়ম আছে। এসব নিষেধাজ্ঞা, নিয়মনীতি না মানলে দণ্ডের বিধানও থাকলেও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নির্ভয়ে নির্দ্বিধায় চলছে এ ব্যবসা।

নগরের পান দোকান, মুদি দোকান, ওষুধের দোকান, লন্ড্রির দোকান, সিমেন্ট বিক্রির দোকান, কসমেটিকের দোকান, লাইব্রেরীসহ ফুটপাতে ছোটখাটো দোকানে অবাধে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ও লাইসেন্স ছাড়াই সিলেট নগরে বাণিজ্যিক এলাকার পাশাপাশি আবাসিক এলোগুলোতেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবসা। নগরের বাগবাড়ি থেকে মদিনা মার্কেট এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১২টি গ্যাস ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে। অধিক লাভের আশায় নগরের বেশিরভাগ আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব সিলিন্ডারের দোকান।

নগরের বাণিজ্যিক এলাকা বন্দরবাজার, মহাজনপট্টি, দক্ষিণসুরমা, সুবহানিঘাট এলাকায় প্রখর রোদে ফুটপাতে মজুদ করে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব এলাকার সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশিরভাগের নেই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র। যাদের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স আছে তারাও নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন না।

এ ব্যাপারে সিলেট বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. আলীম উদ্দিন বলেন, ‘ ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের পর টাস্কফোর্সের অভিযানের কারণে এতদিন ঢাকায় ছিলাম আমি। দুইদিন হল সিলেটে এসেছি। আজকে (শুক্রবার) যেহেতু বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তাই দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত