শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

৩০ জুন, ২০১৯ ২২:৫০

শ্রীমঙ্গলে হামলা-পাল্টা হামলায় এলাকায় উত্তেজনা

শিল্প বর্জ্যের দূষন থেকে পরিবেশ রক্ষার দাবীতে গত সপ্তাহে মানববন্ধনে নেতৃত্বদানকারীর উপর গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার পর দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এতে  গুরুতর আহত হয়ে সিলেট ও মৌলভীবাজারে ৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উল্লেখ্য গত সোমবার (২৪ জুন) বিকেলে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউপির রাজপাড়া গ্রাম এলাকায় নির্মানাধীন রশনি পলি ফাইবার ইন্ড্রাস্ট্রির সামনে তাদের কার্যকলাপে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে মানববন্ধন করে একদল গ্রামবাসী।

ওইদিন সন্ধ্যার পরই দু’দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার সুত্র ধরে রোববার সকালে শ্রীমঙ্গল - ভূনবীর-শমশেরগঞ্জ রাস্তা বন্ধ করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিবাদমান দুটি পক্ষের লোকজন ফের অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ওই মানববন্ধনে নেতৃত্বদানকারী কদর মিয়ার উপর একদল লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় এবং তাকে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনার পরপরই কদর মিয়ার পক্ষের লোকজন ঐ হামলাকারীদের উপর হামলা করে আহত করে। দুই পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষে গ্রামে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে রোববার সকালে আবারো এই দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে যেতে চায় তবে পরে পুলিশের উপস্থিতিতে সরে পরে।

তবে দু’পক্ষের মারামারির বিষয়ে নির্মানাধীন রশনি পলি ফাইবার ইন্ড্রাস্ট্রির কোন সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন প্রজেক্ট ম্যানেজার তোফাজ্জল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা শিল্প স্থাপনের নিয়ম মেনেই সবকিছু করছি।

সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত কদর মিয়া মুঠোফোনে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আছকির মিয়া তার দলবল নিয়ে আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। গত কয়েকদিন আগে রশনি পলি ফাইবার কোম্পানীর বর্জ্য পদার্থ ও পানির পাইপের সংযোগ ছড়ার (পাহাড়ি জলধার) পানিতে ফেলে গ্রামের পরিবেশ দূষণরোধে না ফেলার জন্য ইউএনওর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবরে গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। আর এ কারনেই স্বার্থান্বেষী মহলটি বিক্ষুব্ধ হয়ে আমার উপর এই হামলার ঘটনা ঘটায়।

তবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আছকির মিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত হামলার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, গ্রামের সবাই আমার নিজের লোক। সবার বিপদে আপদে আমি ছুটে যাই। এখানে কিছু মানুষ ও আমার দলেরই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাকে এই ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা করেছে। মুলত আমি এই ঘটনার কথা লোকমুখে জেনে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে যাই এবং আমি নিজে আহত দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।

শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা জানান, রশনি পলি ফাইবার ইন্ড্রাস্ট্রির বর্জ্য ও পানি নিস্কাশনের বিষয় নিয়ে গ্রামের কিছু মানুষ পক্ষে-বিপক্ষে গিয়ে নিজেদের মাঝে ঝামেলা করেছে বলে পুলিশকে গ্রামবাসী জানিয়েছে। আমরা রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তা বন্ধ পাইনি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকাদের আমরা সরিয়ে দিয়েছি। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। হামলা ও মারামারির বিষয়ে কেউ এখন পর্যন্ত (এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত) মামলা হয়নি। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখছি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঐ এলাকার মুরব্বিয়ান, জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের কক্ষে একটি সভায় মিলিত হই এবং আইনশৃঙ্খলা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য সকল পক্ষকে ধৈর্য্য ধরতে বলি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত