শাকিলা ববি

২৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:৪৫

নগরীর ডাস্টবিনগুলো গেলো কোথায়?

যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ ও নগরীতে পরিষ্কার রাখনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় আড়াইশ' ডাস্টবিন বসিয়েছিলো সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। তিন বছরের মাথায় এই ডাস্টবিনগুলোর বেশিরভাগেরই অস্থিত্ব নেই। হারিয়ে গছে প্রায় সবকটি। তবে যতদিন ছিলো, ততদিনও প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিলো ডাস্টবিনগুলো।

সিটি করপোরেশন সংশ্লিস্টরা বলছেন, রাতের আঁধারে চুরি হয়ে গেছে ডাস্টবিনগুলো। ছিনতাইকারী, মাদকসেবীরা এর সঙ্গে জড়িাত থাকতে পারে বলে মনে করেন সিসিক কর্মকর্তারা।

জানা যায়, পরিচ্ছন্নতা ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে সিলেট নগরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয় লোহার ফ্রেমে বাধানো স্টিলের ২১টি ডাস্টবিন। প্যাকেটজাকত, বোতলজাত, অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দুর্গন্ধবিহীন ময়লা ফেলার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এসব ডাস্টবিন বসানো হয়। একই বছরের সেপ্টেম্বরে আবারও নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ২০০ প্লাস্টিকের ডাস্টবিন বসানো হয়। চুরি ঠেকাতে ওই সময় প্লাস্টিকের ডাস্টবিনগুলোতে লাগানো হয় লোহার শিকল।

তবে তিন বছরের মাথায় হারিয়ে গেছে স্টিলের সবগুলো ডাস্টবিন। প্লাস্টিকের ডাস্টবিনগুলোরও বেশিরভাগের অস্থিত্ব নেই। কয়েকটি অযত্নে টিকে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে।

স্থাপনের পর থেকেই দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিলো ডাস্টবিনগুলো। ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন ব্যবহারে তেমন আগ্রই দেখা যায়নি নগরবাসীর। এখন নগরের কয়েকটি জায়গায় ডাস্টবিনের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লোহার ফ্রেম। অনেক জায়গায় এই লোহার ফ্রেমও নেই। শুধুমাত্র মাটির সাথে মিশে যাওয়া লোহার ফ্রেমের পায়ার অংশবিশেষ দেখা যায়।    

ডাস্টবিনগুলো আড়ালে ছিল না। সিলেট নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কেই পাশেই বসানো হয়েছিলো। নগরের চৌহাট্টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনের গেটের দু’পাশেও বসানো হয়েছিল ডাস্টবিন। জনবহুল এই জায়গা থেকেও উধাও হয়ে গেছে স্টিলের ডাস্টবিন দুটি।  

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে নগর পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ হিসেবে নগরের বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২১টি স্টিলের ডাস্টবিন বসানো হয়েছিল। প্রতিটি ডাস্টবিনের গায়েই নির্দেশনা হিসেবে প্যাকেটজাত, বোতলজাত, অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দুর্গন্ধবিহীন ময়লা ফেলার কথা লিখা ছিল। নগরের চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, তালতলা ও বন্দরবাজারসহ আরো কিছু এলাকায় রাস্তার পাশে ডাস্টবিনগুলো বসানো হয়েছে। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে ২০০ প্লাস্টিকের ডাস্টবিন বসানো হয় নগরে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, রিবাকীবাজার, শেখঘাট, তালতলা, মদিনা মার্কেট, সোবহানীঘাটসহ নগরের বিভিন্ন এলাকা বসানো স্টিলের ডাস্টবিনের ফ্রেম অবশিষ্ট আছে। যে পাত্রটি ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য দেয়া হয়েছিল সেগুলোর নেই। অনেক জায়গায় ফ্রেমের অস্তিতও পাওয়া যায়নি। প্লাস্টিকের যে ডাস্টবিনগুলো এখনও টিকে আছে সেগুলোও রয়েছে অযত্নে।

মূলত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও নগরবাসীর অসচেতনতার কারণেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

এব্যাপারে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান বলেন, মূলত জনগণের অসেচতনতার কারণে স্টিলেন ডাস্টবিনগুলো অব্যবহৃত ছিল। পরবর্তীতে আরো প্লাস্টিকের ডাস্টবিন দেওয়া হয় নগরে। এখন এই ডাস্টবিনগুলো রক্ষণাবেক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমার তো রক্ষণাবেক্ষণের সার্বিক চেষ্টা করছি। তবে আমাদের এই কাজে সফলতা আসবে না যদি ডাস্টবিন ব্যবহারকারীরা সচেতন না হন। সরকার প্রদত্ত সকল জিনিসই রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এবং এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষাণবেক্ষন করা সকলের দায়িত্ব।

তিনি আরো বলেন, যেসব জায়গার ডাস্টবিনগুলো নষ্ট এবং চুরি হয়ে গেছে সেসব জায়গায় আবারো ডাস্টবিন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সিসিকের। শীঘ্রই এই কাজ শুরু করবো আমরা। সিসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ সর্বদা নগর পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত আছে। তবে নগর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। এবং আরো সচেতন হতে হবে। কারণ নগরের অপরিচ্ছন্নতার দায়ভার কারো একার না। এ দায় সবার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত