দেবকল্যাণ ধর বাপন

০১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:৩৩

একদিনের ব্যবধানে সিলেটে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার মুদি দো্কানি রহিম মোল্লা। রোববার দিনি তিনি প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেন ৬০ টাকা দরে। একই দোকানে বিকেল বেলা তা ২০ টাকা বেড়ে হয়ে যায় ৮০ টাকা। বিকেল গড়িয়ে রাত হতেই আবারও ১০ টাকা বাড়ে পেঁয়াজের দাম। রাত পেরোতেই সোমবার সকালে কেজি প্রতি আরও ১০টা বাড়িয়ে দেন পেঁয়াজের দাম। আর সোমবার বিকেলে রহিমার দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১২০ টাকা করে।

কেবল এই একটি দোকানই নয়, সোমবার নগরীর বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ও খুচরা দোকান ঘুরে পেঁয়াজের বাজারের এই অস্থিরতার চিত্র দেখা গেছে। অনেক জায়গিয় ঘন্টার ব্যবধানেও বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। রোববার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এই অস্থিরতার শুরু হয়। রোববার থেকে সোমবার একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা থেকে দিগুণ বেড়ে ১২০টাকা হয়ে যায়।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার, তালতলা, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেটসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের।

মদিনা মার্কেটে পেঁয়াজ কিনতে আসা তাহমিনা নামের এক ক্রেতা বলেন, “রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় একটি পণ্য পেঁয়াজ। প্রতিদিনের রান্নায় পেঁয়াজ লাগে। রোববার খবরে দেখলাম ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে। তাই পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম এতোটা বাড়বে চিন্তাও করিনি।”

এ ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রোববার ভারত সরকার ঘোষণা দিল আর সোমবার বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি দিগুণ বেড়ে গেল। এটা রীতিমত অস্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।”

সোমবার দুপুরে সিলেট নগরীর তালতলা এলাকায় বিগ বাজার নামের একটি সুপার শপে পিয়াজ বিক্রি হয় ১১০ টাকা কেজি দরে। একই পেঁয়াজ আগেরদিন সকালে ৬০ টাকা ও রাতে ৮০ টাকা দাম ছিল।

এ ব্যাপারে কথা হয় দোকানের সত্ত্বাধিকারী সাগর দাসের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “রোববার সকালে আমরা পাইকারি বাজার থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনে আনি। সেই পেঁয়াজ বিকেলে একই বাজার থেকে কিনি ৭৬ টাকা দরে। আর সোমবার সকালে বাজারে গিয়ে দেখি একই পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি করছে ১০০ টাকা কেজি দরে।”

নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি বার্মার (মিয়ানমার) পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১০০ টাকা দরে।   

এখানকার বিক্রেতারা হবিগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, আজই প্রথম বার্মার পেঁয়াজ পেলাম। পাইকারি বাজারে এই পেঁয়াজ আমাদের কাছ থেকে ৯০ টাকা রেখেছে প্রতি কেজিতে। কিন্তু রোববারও আমরা ভারতের পেঁয়াজ কিনি ৬০ টাকা থেকে ৬৫টাকা দরে। কিন্তু সোমবার পাইকারি বাজারে এলসি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা কেজি। তাই বাধ্য হয়েই ১০ টাকা কমে বার্মার পেঁয়াজ কিনে এনে ১০০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে কি কারণে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেননি এ বিক্রেতা।

সিলেটের কালীঘাট এলাকার পেঁয়াজের পাইকারী আড়তগুলোতে গিয়েও দেখা যায়, আগেরদিনের চেয়ে প্রায় দিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।সেখানে একাধিক পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা বলেন,  ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণার সাথে সাথে দেশের বাজারে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। এছাড়াও ঘোষণার আগের দুইদিন দেশের বিভিন্ন পোর্ট দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে না আসায় অস্থিতিশীল হয়েছে পেঁয়াজের বাজার।

কালীঘাট এলাকার মেসার্স সজল বাণিজ্যালয় নামের একটি আড়তের সত্ত্বাধিকারী সজল সরকার বলেন, সকালে রাজশাহী ও ঝিনাইদহের পেঁয়াজ পাইকাররা ফোন করে বলেন ১০০ টাকা দরে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করতে বলেছেন। কিন্তু এই একই পেঁয়াজ রোববার আমরা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।

হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ল কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত হল গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। সেই দেশ থেকেই যদি হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে বাজারে তো কিছুটা প্রভাব পড়বেই।

তিনি জানান, ভারতের পেঁয়াজের তুলনায় দেশী পেঁয়াজ সাইজে তুলনামূলক ছোট। ফলে এ পেঁয়াজের কদর সিলেটের বাজারে কম। তিনি বলেন, সিলেটের ক্রেতারা দেশী পেঁয়াজ কেনার পতি আগ্রহ কম দেখান। তাই আমরা দেশী পেঁয়াজ আড়তে উঠাই না। তবে যেভাবে ভারতীয় পিঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে, কিছু দিনের মধ্যেই বাজারের দেশী পেঁয়াজ চলে আসলে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে আসবে বলে মনে করেন সজল সরকার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত