নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:৩৫

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে ভারত: মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফররত মেঘালয় সরকারের একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার, সন্ধ্যায় চেম্বার কনফারেন্স হলে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছেন। সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মোঃ শোয়েব এর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মেঘালয় সরকারের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী স্নিয়াওভালাং ধর, শিক্ষামন্ত্রী লেকমেন রিম্বুই ও কৃষিমন্ত্রী বেনতেইদর লিংডহ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভূতপূর্ব। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার শিল্প, বাণিজ্য, সামাজিক অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক ও সামাজিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য সমূহের উন্নয়নে বাংলাদেশের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সাথে পাবলিক টু পাবলিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। তিনি পর্যটন খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ও মেঘালয়ের ট্যুর অপারেটরদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।

কয়লা রপ্তানি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সুন্দরভাবে চালু রাখতে চাই কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্যের কথা বিবেচনা করে মাঝে মধ্যে কয়লা রপ্তানি বন্ধ করা হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে ভারত সরকার কাজ করছে। তিনি তামাবিলের বিপরীতে ডাউকি এলসি স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারে নতুন দুইটি এলসি স্টেশন চালুর পরিকল্পনা ভারত সরকারের রয়েছে বলে জানান। তিনি সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদলকে শিলং ভ্রমণের আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মোঃ শোয়েব বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশী পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে, কিন্তু কিছু নন ট্যারিফ অসুবিধার কারণে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এসব সমস্যা সমাধানে ভারত সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার অত্যন্ত বিনিয়োগ বান্ধব। বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক ও গোয়াইনঘাটে নির্মাণাধীন স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের আহবান জানান। তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, আইটি, শিল্প ইত্যাদি খাতেও বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের আহবান জানান। তিনি বলেন, অনেক বাংলাদেশী অবকাশকালীন সময়ে শিলং ও গোহাটি ভ্রমণ করেন, কিন্তু সেখানে তাদেরকে হোটেল সংক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হয়। তিনি শিলং ও গোহাটির বিনিয়োগকারীগণ উৎসাহী হলে এবং সরকারের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীগণ শিলং ও গোহাটিতে যৌথ উদ্যোগে হোটেল নির্মাণ করতে আগ্রহী বলে জানান। তিনি দ্বি-পাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

মেঘালয় সরকারের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ড. শাকিল আহমদ বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের মধ্যে বিরাজমান অপার বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর এখনই সময়। ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিলে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে তেমনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলও দারুণ লাভবান হবে। কারণ কলকাতা বন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরা ও গোহাটিতে পণ্য পৌঁছাতে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা সময় সড়ক পরিবহনে ব্যয় হয়, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারলে মাত্র ১০-১২ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য ঐসব অঞ্চলে পৌঁছানো সম্ভব হবে। প্রতিনিধিগণ বলেন, মেঘালয় থেকে প্রচুর পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। এই পানির প্রবাহকে ব্যবহার করে যৌথ উদ্যোগে পানি বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ করতে পারলে সেখান থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অত্যন্ত কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও দুই দেশে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রয়ের জন্য বর্ডার হাটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সভায় দুই দেশের শিক্ষা খাতের উন্নয়ন নিয়ে বক্তব্য রাখেন মেঘালয়ের শিক্ষামন্ত্রী মিঃ লেকমেন রিম্বুই। সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে বক্তাগণ ভারতে থেকে কয়লা রপ্তানি নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালু রাখা, বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আইন-কানুন শিথিল করা, পণ্যের মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিএসটিআই এর সার্টিফিকেট গ্রহণ করা অথবা সীমান্তবর্তী এলাকায় ল্যাব স্থাপন করে তা যাচাই করা, ডাউকি এলসি স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

সভায় অন্যান্যে মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন সাহা, সহ সভাপতি তাহমিন আহমদ, পরিচালক মোঃ এমদাদ হোসেন, বারাকা পাওয়ার লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিম আহমদ চৌধুরী, লিডিং ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক রুমেল এম. এস. রহমান পীর।

এসময় উপস্থিত ছিলেন মেঘালয় সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য সচিব মিঃ মেবানশাই আর. সিনরেম, পরিকল্পনা সচিব ড. বিজয় কুমার ডি, ভৌগলিক ও খনিজ সম্পদ সচিব ড. মানজুয়ান্তা, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার এল. কৃষ্ণমূর্তি প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত