নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ২১:০৬

সেই হিরণের সব অভিযোগ আশফাকের বিরুদ্ধে

সিলেটের রাজনীতি এখন আলোচিত নাম হিরণ মিয়া। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয় তাকে। তবে সমালোচনার মুখে একদিন পরই স্থগিত করা হয় সেই কমিটি। সরিয়ে দেওয়া হয় হিরণকে।

তবে হিরণ নিজেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করেছেন। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদকেও দায়ী করেছেন তিনি।

শনিবার বিকালে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এমন ইঙ্গিত করেন তিনি। একইসঙ্গে ‘চ্যালেঞ্জ’ দিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে তার কোনো ‘সম্পৃক্ততা ছিল না’।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হিরণ মিয়া বলেন, ‘আমি ১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্য যাই। সেখানে লেখাপড়া করে ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হই। ২৫-৩০ বছর পূর্ব থেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাথে আমি সম্পৃক্ত হই। ছাত্রাবস্থা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর একজন অনুসারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অভিপ্রায়ে কাজ করছি। ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে যুক্ত থাকায় পদপদবি গ্রহণ না করে বঙ্গবন্ধুর একজন কর্মী হিসেবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করেছি। ২০০৪ সালে এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার অনুসারী হিসেবে আমি ১৯৯৬ সালে দেশে এসে নিজ ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। বৃহত্তর লামাকাজি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-যুক্তরাজ্য এর আর্থিক সহায়তায় চক্ষুশিবির, স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তাসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করি। ২০১১ সালে ইউনিয়নবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে এলাকার উন্নয়নে আমি ইউপি নির্বাচনে অংশ নিলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ আমাকে সমর্থন দেয়। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী জামাত-বিএনপি প্রার্থী শামছুল ইসলাম টুনু নির্বাচনে জয়লাভ করেন। আমি সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হই। ওই সময় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও দল বিভিন্নভাবে সমর্থন দেয়।’

হিরণ মিয়া আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পর থেকে আমি সক্রিয়ভাবে আমার দলের সাথে যোগাযোগ রেখে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করি। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল ও অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে দলের পক্ষে মাঠে কাজ করি। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে আমাকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামছুল ইসলাম টুনুকে পরাজিত করে আমি নির্বাচিত হই। আমার পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখেন। কিন্তু সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ তার ব্যক্তিস্বার্থে জামায়াত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষক শামছুল ইসলাম টুনুর পক্ষাবলম্বন করে আমার নির্বাচনী প্রচারে একদিনও অংশগ্রহণ করেননি। সদরের ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টিতে নৌকা বিজয় লাভ করে, যার একটি হচ্ছে মোগলগাঁও ইউনিয়ন। জামায়াত-বিএনপি এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে নানা অপকৌশলে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে বাদ দিয়ে অনেক সময় আমার ইউপিতে টুকুকে নিয়ে প্রকল্প উদ্বোধন করেন।’

হিরণ মিয়া জানান, গত ২৪ নভেম্বর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে তিনি কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেন। কাউন্সিলর তালিকা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ থাকায় ও জামায়াত-বিএনপির ‘অনেক লোক অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়’ সম্মেলনে ভোট গ্রহণ হয়নি। পরদিন সমঝোতার ভিত্তিতে তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

হিরণ মিয়া বলেন, ‘এরপর জামায়াত-শিবিরের মদদপুষ্ট মহল সক্রিয় হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। আমি নাকি যুক্তরাজ্য বিএনপির ক্রয়ডন শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, কোনোদিন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল করিনি। মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্যসন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের কাছে আমি পরাজিত। আশফাক আহমদ, শামছুল ইসলাম টুনুসহ এই চক্রটি তাদের পকেট কমিটি গঠনে ব্যর্থ হয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার মানসে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ভুল বুঝিয়ে আমাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত করেছে।’

যারা তার বিরুদ্ধে তথ্যসন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র করে মানহানি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন হিরণ মিয়া। এছাড়া অভিযোগ যাচাই না করে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা দলের জন্য ‘শোভনীয় নয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমির উদ্দিন আহমেদ, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক শাহজাহান আহমদ, জালালাবাদ ইউপি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশ্রব আলী, মোগলগাঁও ইউপির ৫নং ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি রণজিৎ দত্ত, ৮নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি আনোয়ার মিয়া, হাটখোলা ইউপির ৭নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল আহমদ, খাদিমপাড়া ইউপির আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল আলী, তারা মিয়া, মোগলগাঁও ইউপি আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম, এ ইউপির ৭নং ওয়ার্ড আ’লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাব আলী, যুবলীগ নেতা আশরাফ সিদ্দিকী, লায়েক মাহমুদ সুমন, কুতুব উদ্দিন, মনির উদ্দিন প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত