নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৮:৪৭

ভূমির মালিকানা পাচ্ছে ৩৯ শহীদ চা শ্রমিকের পরিবার

তারাপুর চা বাগানের উদ্যোগ

১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল পাকবাহিনী সিলেটের তারাপুর চা বাগান গণহত্যা চালায়। এতে শহীদ হন চা বাগানের ৩৯ শ্রমিক। এই শহীদ পরিবারগুলোকে নিজস্ব জমির প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। ১৬ ডিসেম্বর (শনিবার) বিজয় দিবসে ৩ শহীদ পরিবারকে জমির দানপত্র হস্তান্তর করা হয়। এরআগে গত বছরের ১৮ এপ্রিল, বাগানের গণহত্যার দিবসে ২০ শহীদ পারিবারের কাছে জমির দানপত্র হস্তান্তর করা হয়। পর্যায়ক্রমে সকল শহীদ পরিবারকে ভূমির মালিকানা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ।

শনিবার শহীদ শ্রমিকদের পরিবারের কাছে জমির দানপত্র হস্তান্তর করেন দেবোত্তোর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত। যিনি নিজেও শহীদ পরিবারের সন্তান। তারাপুর চা বাগানের গণহত্যার দিনে পংকজ গুপ্তের বাবাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। শহীদ হন বাগানের চিকিৎসকসহ কয়েকজন স্টাফও।

চা বাগানের শ্রমিকরা ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। কয়েক প্রজন্ম ধরে বাগানে বসবাস করলেও জমির মালিকানা নেই তাদের। এ অবস্থায় তারাপুর চা বাগানের শহীদ শ্রমিক পরিবারগুলোকে জমির মালাকানা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ।

সিলেটের তারাপুর চা বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি। হাজার কোটি টাকার এই সম্পত্তি দীর্ঘদিন জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে রেখেছিলেন সমালোচিত শিল্পপতি রাগীব আলী। ২০১৬ সালে আদালতের নির্দেশে বাগানটি সেবায়েত পংকজ গুপ্তকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই পঙ্কজ গুপ্ত এই বাগানের দায়িত্বে রয়েছেন।



সোমবার সকাল ১০ তারাপুর চা বাগানের শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ৩টি শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দানপত্র হস্তান্তর করা হয়।

শহীদ লুবিয়া ঘাটয়ারের একমাত্র উত্তরাধিকারী ভাতিজা নাথুরাম, শহীদ চুরী কড়ামুদির একমাত্র উত্তরাধিকারী বোন নির্মলা কড়ামুদি ও শহীদ সুরেন্দ্র ভূমিজের একমাত্র নাতনী প্রতিমা ভূমিজ জমির দানপত্র গ্রহণ করেন।
    
এসময় তারাপুর চা বাগানের বর্তমান সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত বলেন, আমি নিজেও শহীদ পরিবারের সন্তান। আমার বাবা, কাকা, ভাইদের ধরে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। বয়সের কারণে সেদিন আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। এই গণহত্যায় শহীদ চা শ্রমিকদের পরিবার এমনিতেই অসহায়। তাই তারা যেন স্থায়ী ভাবে বাসস্থানের জায়গা পায় সে ব্যবস্থা করেছি। এরআগে ২০টি শহীদ পরিবারের সদস্যদের জায়গা দানপত্র করে দিয়েছি। এর ধারাবাহিকতায় আজ আরও তিনজনকে জায়গার দানপত্র দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল শহীদের পরিবারকে তাদের জায়গা দানপত্র করে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এর চেয়ে বেশি কিছু দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমি মনে করি এই অসহায় মানুষগুলো জন্য কিছু করলে আমার পূর্বপুরুষদের আত্মা শান্তি পাবে।  

এরআগে বিজয় দিবস উপলক্ষে চা বাগানের স্মৃতিস্তম্ভ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, বাগান কর্তৃপক্ষ, শহীদ পরিবারের সদস্য, চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি, যুবসংঘসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন সংগঠনের মানুষজন।
 
প্রথমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে চা শ্রমিক ও শহীদ পরিবারের শিশু কিশোররা। গণহত্যায় শহীদের স্মরণে এক মিনি নীরবতা পালন করা হয়।

সংস্কৃতিকর্মী রজত কান্তি গুপ্তের পরিচালনায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত। মুক্তিযোদ্ধা সুকেশ চন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন। এছাড়ারও চা শ্রমিক ও শহীদ পরিবারের সন্তানরা দেশাত্মবোধক গান, নৃত্য, আবৃত্তি ও মুক্তিযুদ্ধের নাটিকা পরিবেশন করে।

উপস্থিত ছিলেন তারাপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক বিজয় কান্তি দে, তারাপুর পঞ্চায়েতের সভাপতি চৈতন্য মুদি, তারাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিপা দেব, সহকারী প্রধান শিক্ষক রুবনা রায়, তারাপুর যুব সঙ্গের সভাপতি জগন্নাথ রায় রাজন, টিলা ক্লার্ক মজিবুর রেজা, জহির আহমেদ চৌধুরী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোরঞ্জন রায় সমর, শহীদ ডাক্তার ক্ষিতীশ চন্দ্র দের ছেলে অসিত বরণ দেসহ শহীদ পরিবারের সদস্য ও চা শ্রমিকরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত