এস আলম সুমন, কুলাউড়া

২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৮:২৩

নিষেধাজ্ঞা, তবু কুলাউড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা

আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কুলাউড়া পৌর শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা। যার ফলে শহরে অহরহ যানজট সৃষ্টিসহ প্রায় প্রতিদিনই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও ব্যাটারি চার্জ দিয়ে বিদ্যুতে অপচয় ও লোডশেডিংয়ের সৃষ্টি করছে এমন অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক বন্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।

কুলাউড়া পৌরশহরের পৌর কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক পুলিশের সামনে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং বিভিন্ন এলাকার সড়কে দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েক সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা। এছাড়া ৪০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন এসব মোটরচালিত রিকশায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনাও। এদিকে ট্রাফিক পুলিশ উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে এসকল অটোরিকশা পুরো কুলাউড়া জুড়ে প্রকাশ্যে চলাচল করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, চলতি বছরে রেকর্ডসংখ্যক কুলাউড়ায় ৩ সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বৃদ্ধি পেয়েছে। পৌরশহরের প্রধান সড়কসহ ৯টি ওয়ার্ডের সবকটি সড়কে দেড় সহস্রাধিক নিবন্ধনহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো শহরের বাইরে বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়কে সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রায় ৩ শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের এসব রিকশার অধিকাংশই নিবন্ধনহীন। অথচ অবৈধ এসব রিকশা উচ্ছেদ ও নিয়ন্ত্রণে পৌর কর্তৃপক্ষ এবং ট্রাফিক পুলিশের কোনো ভূমিকাই নিচ্ছে না।

পৌরশহরের সরেজমিনে একাধিক অটোরিকশা চালকের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, সমিতির নাম করে কয়েকটি সিন্ডকেটচক্র রিকশাচালকদের কাছে চাঁদা আদায় করে। এসব চাঁদা থেকে একটি অংশ ট্রাফিক পুলিশকে উৎকোচ দেয়া হয় বলেও জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার নিবন্ধন পাওয়া একাধিক রিকশা চালক বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিক সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য ৩শ টাকা এবং পরিবহন কার্ডের জন্য ১শ টাকা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩ হাজার টাকা দিয়ে ২ মাস আগে পৌরসভার নিবন্ধন পেয়েছেন।

এদিকে নিবন্ধনহীন একাধিক রিকশা চালকের কাছে জানতে চাইলে বলেন, নিবন্ধন এখন পৌরসভা দিচ্ছেনা। সমিতিকে টাকা দিয়ে কার্ড নিয়ে রিকশা চালাচ্ছি। সমিতির নাম জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

এদিকে পৌরশহরের স্কুল চৌমুহনীস্থ রবিরবাজার সড়কের পাশে অবস্থিত বোরহান উদ্দিন মার্কেটে রাত ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটের একেকটির দোকানকোটার ভিতরে ৩-৪টি অটোরিকশা চার্জ দেয়া হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত রিকশা মালিকরা জানান, মার্কেটের এসব দোকান কোটা তারা ভাড়া নিয়েছেন। প্রতিদিন এসব দোকানে সারারাত রিকশা চার্জ দেওয়া হয়। অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, এসব কিছু জানিনা।

আশফাক তানভীর, এনামুল আলম, আলাউদ্দিন আহমদ, ইকবাল আহমদ ও রিপন দেবসহ একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এ বছর উপজেলার পৌরশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধে বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। যার দাপটে পা চালিত রিকশা এখন একেবারেই কমে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে এসব রিকশায় ওঠতে হয়। মোটরচালিত দ্রুতগতির হওয়া অদক্ষ চালকরা বেপরোয়াভাবে ওভারটেক ও নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে রাস্তায় বাঁক নেওয়ার সময় প্রায়ই ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটে। এসব রিক্সা শহর ও আশেপাশের বাজারে সড়কের ওপর যত্রতত্র পার্কিং করায় যানজটও তৈরি হয়। এসব রিক্সায় তিনটি করে ব্যাটারি রয়েছে। এসব ব্যাটারি চার্জে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বিক্রয় ও চলাচলের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সমিতির নামে সিন্ডিকেট করে চাঁদার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক পুলিশকে মেনেজ করে প্রশাসনের চোখের সামনে দাপটে চলাচল করছে অটোরিকশা। অথচ ট্রাফিক পুলিশ ও পৌর কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। শীঘ্রই নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আগামী এক বছরে অবাধে অটোরিকশা বৃদ্ধিতে শহরজুড়ে ভোগান্তি এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করবে।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া পৌরসভার সচিব শরদিন্দু চক্রবর্তী বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ, কিন্তু জনস্বার্থে এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। শহরে নিবন্ধিত রিকশা কতটা আছে জানতে চাইলে তিনি অফিসে যেয়ে প্রতিবেদককে আলাপ করতে বলেন।

এ বিষয়ে জানতে ট্রাফিক পুলিশ কুলাউড়া কার্যালয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলামের অফিসে একাধিকবার গিয়েও তাকে না পাওয়া গেলে তার মোবাইলে কল দিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান তিনি। এদিকে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রফিকুল ইসলামের মোবাইলে তার সাথে যোগাযোগ করে উৎকোচের অভিযোগের কথা জানতে চাইলে এই প্রতিবেদকের সাথে তিনি উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ ই আরেফিন বলেন, আমরা বিভিন্নসময় অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো রাতের বেলায় বিভিন্ন স্থানে চার্জ দেওয়া হয় শুনেছি। এতে বিদ্যুতের অপচয় হয়। কিন্তু রাতের বেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাই অভিযান চালানো যায়না। তবে আমরা পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে বিষয়টি আলাপ করে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করবো।

কুলাউড়া পৌর মেয়র শফি আলম ইউনুছের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিন চাকার পা চালিত রিকশা দেখিয়ে কিছুদিন আগে কয়েকটি নিবন্ধন নিয়েছিলো রিকশাচালক। এগুলো অটোরিকশায় লাগিয়ে চলাচল করছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে নিবন্ধনহীন রিকশার উচ্ছেদে অভিযানে নামবে পৌর কর্তৃপক্ষ।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী মোবাইল ফোনে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত