এস আলম সুমন, কুলাউড়া:

২০ জানুয়ারি, ২০২০ ১৮:০৪

শিশুটি হরিজন সম্প্রদায়ের, তাই স্কুলে যেতে বাধা

হরিজন সম্প্রদায়ের মনা বাসপর ও পুতুল বাসপর দম্পতির বড় ছেলে বিরাট এবছর ছয়ে পা দিয়েছে। মা-বাবার ইচ্ছে ছিলো- ছেলে পড়াশোনা করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, যাতে নিজেদের মতো সমাজে তিরস্কার আর অবহেলায় দিন কাটাতে না হয়। সেই লক্ষ্যে নিজেদের পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে ছেলেকে একটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করেছিলেন। বিদ্যালয়ের শর্তানুযায়ী ড্রেস, বই ও ব্যাগসহ সবকিছু জোগাড় করেছিলেন দরিদ্র এই দম্পতি।

তবে সব আয়োজন সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে যাওয়া আটকে যায় বিরাটের। ওই বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের আপত্তি, ওই শিশু ‌'অচ্ছুত' হরিজন সম্প্রদায়ের। হরিজন পরিবারের শিশুর সাথে তাদের সন্তানকে পড়াতে আপত্তি এই অভিভাবকদের।

এমন ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরে। বিরাট বাসপর কুলাউড়ার পরিনগর এলাকার বাসিন্দা হরিজন সম্প্রদায়ের মনা বাসপরের ছেলে। বিষয়টি চাউর হলে অবশেষে ইউএনওর হস্তক্ষেপে বিরাট শনিবার থেকে বিদ্যালয়ে ফিরে। এদিকে অচ্ছুত আচরণের কারণে বিদ্যালয়ে সহজ পাঠদান করতে পারবে কিনা এই চিন্তায় বিরাট ও তার মা বাবা শঙ্কায় রয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষা সবার মৌলিক অধিকার, বিরাট যেই সম্প্রদায়ের হোক শিক্ষা অর্জনের অধিকার থেকে কেউ তাকে বঞ্চিত করতে পারবে না।

তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষকে আমার কার্যালয়ে ডেকে এনে ওই স্কুলছাত্রকে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। এই বৈষম্য রোধে শীঘ্রই স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক সভার উদ্যোগ নিয়েছি।

জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি কুলাউড়া শিবির এলাকার অগ্রদূত চাইল্ড কেয়ার হোমস্ নামে একটি বিদ্যালয়ে যথাযথ নিয়ম মেনে ছেলে বিরাটকে ভর্তি করেন মনা বাসপর। ভর্তির পরদিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিরাটের পিতা মনা বাসপরকে মোবাইলে জানিয়ে দেন বিরাটকে স্কুলে না যেতে। এই ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে শিশুটির বাবা মনা বাসপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন।

বিরাটের বাবা মনা বাসপর বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা জানায় আমরা হরিজন সম্প্রদায় বলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে গিয়েও আমার সন্তান আজ বৈষম্যের শিকার।

তিনি বলেন, আমরাতো পরিশ্রম করে আয় করি। তবু আমাদের সাথে কেনো এমন বৈষম্য। এখন ছেলে স্কুলে ফিরলেও স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা করতে পারবে কি না এটাই এখন দুশ্চিন্তা।

বিরাটের মা পুতুল বাসপর আক্ষেপের সুরে বলেন, স্বাধীন দেশে আমরা এখনো সমাজের কাছে অবহেলিত। আমরাতো খেটে খাই। অন্যায় করি না তবুও মানুষ আমাদের দেখলে আড়চোখে তাকায়।

তিনি বলেন, ই্উএনও স্যার বিরাটকে ক্লাস করার সুযোগ করে দিয়েছেন। ক্লাসে গেলেও আমার ছেলেটার সাথে কেউ মিশবে না। এভাবে সে কতদিন একা একা পড়াশোনা করবে?

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিখিল বর্ধন জানান, হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে হলেও আমরা তাকে ভর্তি করেছি। কিন্তু তার ক্লাসে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন কিছু অভিভাবক। এই ছেলেকে ভর্তি করলে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদেরকে আমাদের বিদ্যালয় থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিবেন বলেও জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ চিন্তা করে আমাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত