দিরিই প্রতিনিধি

০৫ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৭:৫৭

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্মৃতি ধরে রাখতে আজীবন কাজ করে যাব: জয়া সেনগুপ্তা

সুনামগঞ্জ ২ আসনের (দিরাই-শাল্লা) সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেছেন, হাওরপাড়ের রাজনীতির বটবৃক্ষ প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আজীবন দিরাই শাল্লার শিক্ষা, কৃষি, যোগাযোগসহ এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি আমাদের যে সম্প্রীতি ও উন্নয়নের রাজনীতি শিখিয়ে গেছেন তার পথ ধরে আমরা রাজনীতি করে যাব। তার স্মৃতি ধরে রাখতে আজীবন কাজ করে যাব ।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ৩য় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদারের সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক বিকাশ রায়ের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশাররফ মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজ দৌলা, অ্যাডভোকেট সোহেল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান এওর মিয়া, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়, দিরাই উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান এহসান চৌধুরী, শিবলী আহমেদ বেগ, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক শফিকুল ইসলাম, পৌর কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ রায় বিশ্বসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সকালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া মঙ্গলবার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

প্রসঙ্গত, বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বর্ণাঢ্য দীর্ঘ ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে  ৮ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরমধ্যে শুধুমাত্র সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) থেকে ৭ বার  ও হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ) থেকে এক বার সংসদ সদস্য হন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের প্রথম খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যানও ছিলেন।  

এর আগে সত্তরের নির্বাচনেও তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত সুরঞ্জিত ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের নির্বাচনেও ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে সারাদেশে আলোচনার জন্ম দেন এই নেতা।

সংসদে সব সময় সরব এ সংসদ সদস্য একজন অভিজ্ঞ সংবিধান বিশেষজ্ঞ হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন। নিজের রাজনৈতিক কৌশল আর যোগ্যতার পরিচয় দেওয়ার ধরুন প্রখ্যাত এই রাজনীতিবিদ টানা ৭ বার সংসদ হিসেবে মনোনীত করে ইতিহাসের অনন্য নজির স্থাপন করে ভাটির মানুষ। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীতে যার রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় সর্বত্রই পরিচিতি পেয়েছিলেন বর্ষীয়ান একজন  রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত  নিজে একতা পার্টি নামক একটি দলও গঠন করেন। এবং দীর্ঘদিন এর নেতৃত্ব দেন।

আইনি দক্ষতা ও বিচক্ষণ রাজনৈতিক জ্ঞান সমৃদ্ধ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম জীবনে বাম রাজনীতিতে নাম লেখালেও, পরবর্তীতে নব্বইয়ের  দশকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে, দলটির  বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদসহ উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালন করেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই সংসদ সদস্য হয়ে সবাইকে চমকে দেওয়া সুরঞ্জিত সেন সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দল ক্ষমতায় এলে রেল মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে খ্যাতিমান এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

তাকে অনেকেই সংসদ কবি বলে সম্বোধন করতেন। ষাটের দশকের উত্তাল রাজনীতি থেকে উঠে আসা বামপন্থি এই নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। একাত্তরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন  এবং ৫ নম্বর সেক্টরের সাব কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  এক সময় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শরীরে বাসা বাঁধে ফুসফুসে ক্যান্সার। ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ফুসফুসের সমস্যার জন্য রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।  এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি সুরঞ্জিতের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে প্রথমে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয়। পরে ৭১ বছর বয়সী সুরঞ্জিতকে রাতেই লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরে ৫ ফেব্রুয়ারি রোববার রাত ৪টার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত  মারা যান।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত