কুলাউড়া প্রতিনিধি

০৭ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ২৩:২৪

চাচীকে ভাতিজার মারধর, মামলা খেলেন ইউপি চেয়ারম্যান

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নের রনচাপ গ্রামে বাচ্চাদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার চাচী বাবলী রানী দেকে মারধর করে ভাসুর পুত্র পান্ত দে। এদিকে গ্রামের পঞ্চায়েতের বিচারের মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চুসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

বিচার শেষ হতেই হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠেন পান্ত দে। এ সময় তাকে শান্ত করতে উপস্থিত সকলে তাকে (পান্ত) আটকানোর চেষ্টা করেন। এর এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং পান্ত আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চুর বিরুদ্ধে ছেলেকে মারধরের অভিযোগ এনে কুলাউড়া থানায় মামলা করেন পান্ত দের মা অর্পিতা দে। এমনটাই জানা যায় স্থানীদের সাথে কথা বলে।

জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বিকেলে কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নের রনচাপ গ্রামে বাচ্চাদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে পান্ত দে (১৮) হাতে হামলার শিকার হন তার চাচা (কাকা) প্রবাসী প্রজয় দেবের স্ত্রী বাবলী রানী দে (৩২)। এক পর্যায়ে পান্ত তার কাকীর তলপেটে এলোপাথাড়ি লাথি মারলে তার প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়। তখন বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবগত করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ৬ দিন চিকিৎসা নেন বাবলী রানী। তারপর মৌলভীবাজারের দুইটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ৩ দিন চিকিৎসা শেষে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়াতে সিলেট নগরীর রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসা নেন এবং সেখানে তার শরীরে একটি অপারেশন করা হয়।

চিকিৎসা শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি উভয়পক্ষকে নিয়ে বাড়িতে বসে সালিশি বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান সাংবাদিক আব্দুল বাছিত বাচ্চু, সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী, স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ আব্দুর রউফ, সাবেক সদস্য সওয়াব আলী, মো. মইনুদ্দীন, মহিলা সদস্য আছমা বেগমসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

বৈঠকে বিভিন্নজন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেবার প্রস্তাব তুলেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু সর্বসম্মতিক্রমে বাবলী রানীর চিকিৎসা ব্যয় বাবদ ২৫ হাজার টাকা প্রদানের রায় দেন এবং ভবিষ্যতে এমন কর্মকাণ্ড না করার জন্য পান্ত দের কাছে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নেন।

কিন্তু জরিমানার টাকা না দেয়ার অজুহাতে এ সময় পান্ত দে উশৃঙ্খল আচরণ শুরু করে এবং উপস্থিতদের হুমকি দিতে থাকে। পরিস্থিতি শান্ত করতে চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিতসহ বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন তাকে (পান্ত) আটকানোর চেষ্টা করেন। এর এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু করে এবং পান্ত আঘাতপ্রাপ্ত হন। এদিকে বৃহস্পতিবার পান্তর মা অর্পিতা দে বাদী হয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চুকে প্রধান আসামী ও বাবলীর স্বামী প্রজয় দেবকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।

এদিকে আহত বাবলী রানী দে গণমাধ্যমকে দেয়া তার বক্তব্যে বলেন, আমার ভাসুরের পুত্রের মারধরে আমি গুরুতর আহত হলে আমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এখনো আমি পুরোপুরি সুস্থ হইনি। আমার চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যানসহ সবার সম্মতিতে মাত্র ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় দেন। তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি। চেয়ারম্যানের ন্যায় বিচারে আমরা শতভাগ সন্তুষ্ট হয়েছি। কিন্তু স্থানীয় একটি বিশেষ মহলের ইন্ধনে উল্টো চেয়ারম্যান সাহেব ও আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আসামী করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু বলেন, জন প্রতিনিধি হিসেবে নিরপেক্ষ থেকে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এরই ধারাবাহিকতায় এলাকাবাসীর অনুরোধে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে সালিশি বৈঠকে পান্ত ও তার মা অর্পিতার অঙ্গীকারনামা নিয়ে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আমাকে হেয়পতিপন্ন করা উদ্দেশে একটি মহল পান্তর পরিবারকে দিয়ে মামলায় আসামী করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম জানান, এ মামলার তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরেজমিন তদন্ত করবো।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়ারদৌস হাসান প্রতিবেদককে জানান, বৈঠকের সময় ইউপি চেয়ারম্যান পান্ত দেকে মাথায় আঘাত করায় সে আহত হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক সত্যতা মেলায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত