জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর

২৫ এপ্রিল, ২০২০ ২০:০৯

আকাশে মেঘের গর্জন, হাওরে আতঙ্ক

বৈশাখ মাসে ক্ষণিকের মধ্যেই রূপ বদলায় আবহাওয়া। এই ভাল এই মন্দ। কখনো বৃষ্টি কখনো রোদ। তাই আকাশে কালো মেঘের গর্জন শুনলেই আতংক বিরাজ করে কৃষকদের মনে। আকাশে কালো মেঘের গর্জন, হাওর রক্ষাবাঁধ ভাঙ্গা, বজ্রপাত আর কাল বৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কায় দিন পাড় করছেন হাওরের কৃষাণ কৃষাণীরা।

প্রতি বছরেই একের পর এক দুর্যোগ হানা দিলেও হওরবাসীর মধ্যে এবার করোনা আতঙ্কও দেখা দিয়েছে। তারপরও সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার হাওরাঞ্চলে কৃষক, নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ মাঠে ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।

জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে বাঁধে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কৃষকদের দাবি বাঁধে কাজ নিম্নমানের হয়েছে। এসব কিছুর আড়াল থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। সেই সুযোগ কাজে লাগান পাউবোর কর্মকর্তারাও।

বিজ্ঞাপন

জেলায় ২০১৬ ও ২০১৭ সালে হাওর রক্ষাবাঁধে দুর্নীতি করায় এক ফসলী বোরো ধান অকাল বন্যায় ৯০শতাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। দুটি বছর কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতির হয়। হাওর ছেড়ে শহর মুখি হয় জীবন জীবিকার সন্ধানে চলে যান হাজার হাজার মানুষ। সেই সব মানুষগুলো করোনার কারণে এবার ফিরেও আসছেন। ফলে তাদের নিয়ে এখন করোনা আতঙ্কে আছেন হাওরবাসী।

সচেতন মহল জানান, মহামারী করোনাভাইরাস ঘরবন্দি করে রেখেছে হাওরবাসীকে। ফলে হাওরাঞ্চলে এখন শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। কৃষকরা ধান কাটা, মাড়াই করা নিয়ে এখন সবাই ব্যস্ত সময় পাড় করলেও আকাশে কালো মেঘের গর্জনে হাওরে আতংক বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে কাল বৈশাখী ঝড় হাওর পাড়ের বসবাসকারী অসহায় মানুষের ঘরের টিন, গাছ-পালা, মাটি ও ছনের তৈরি ঘরে আঘাত হেনেছে। ফসলী জমিগুলোও শিলা বৃষ্টি ও কাল বৈশাখী ঝড়ের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়েছে।

জেলার শনির হাওর পাড়ের কৃষক সাদেক আলীসহ হাওরপাড়ের কৃষকগণ বলেন, এবার হাওরেই বোরো ধানের ফলন ভাল হলেও করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকট আর আবহাওয়ার বৈরী আচরণে আমারা আবারও চিন্তার মধ্যে আছি। বর্তমান করোনাভাইরাস আর বজ্রপাতের ভয়ে শ্রমিকরা ধান কাটতে হাওরে যেতে চায় না। আর যে কিছু শ্রমিক পাই তারা আবার মজুরী বেশী দাবি করছে। আকাশে মেঘের গর্জন মানেই বৃষ্টি আতঙ্ক। পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভাঙ্গার ভয়। কারণ এবারও বাঁধে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, এই উপজেলায় প্রকৃতির বৈরী আচরণে হাওর পাড়ে শ্রমিক সংকট বাড়িয়ে দিচ্ছে। আরও বাড়িয়েছে করোনাভাইরাস। তারপরও কৃষকগণ নিজেদের মত করে পরিবারে লোকজন নিয়েই পাকা বোরো ধান কেটে শেষ করার চেষ্টা শুরু করেছে। বজ্রপাত প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া খুবেই প্রয়োজন। ধান পেকে গেলেই তা কেটে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।

বিজ্ঞাপন

কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, হাওরের ধান কাটতে শ্রমিক ও কৃষককে প্রতিদিনই উৎসাহিত করছি। চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় এবার সুনামগঞ্জে ২লাখ ২১হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফশি ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, চলতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে সুনামগঞ্জে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে ৬৪০ কিলোমিটার ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করেছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি হাওরের বাঁধ রক্ষায়। প্রতিটি বাঁধ নজরদারিতে রেখেছি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জি বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা আরও কঠিন হয়েছে। আমাদের জেলার হাওরে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকট কৃষকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এই অবস্থায় কৃষকদের সাহস ও শ্রমিকদের উৎসাহ দিতে হাওরে নেমে সংহতি প্রকাশ করেছি। হাওরের ধান তোলতে পারলে আমাদের কোন অভাব থাকবে না। তাই সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে আহবান জানিয়েছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত