২৪ জুলাই, ২০১৫ ২২:৫৬
ঈদ শেষ হয়ে গেছে। তবে ঈদের রেশ এখনো কাটেনি। অন্তত শ্রীমঙ্গলে এখনো বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। চায়ের রজধানী খ্যাত এই নৈস্বর্গিক সুন্দর অঞ্চলটিতে পর্যটকদের এখন উপচে পড়া ভীড়। বৈরি আবহাওয়া, টানা বর্ষণ কিছুই ঠেকাতে পারছেনা পর্যটকদের স্রোত।
থেমে থেমে বৃষ্টি, পিচ্ছিল পথঘাট- দিনভর আবহাওয়ার এমন বৈরী আচরণের মাঝেও পরিবার পরিজন আর বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে অনেকে যে যার মত করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আকাঁবাকা পাহাড়ী পথ ধরে। এক পাশে সারি সারি চা বাগান অন্যপাশে গভীর অরন্যে জানা অজানা হাজারও বৃক্ষের সমাহার। একবার নয় যেন বারবার ফিরে আসতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির এমন শীতল ছায়ায়। তাইতো এবারের ঈদের ছুটিতে প্রাণ ভরে এমন শীতল প্রকৃতির স্পর্শ নিতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছিল শ্রীমঙ্গলের সবগুলো পর্যটন কেন্দ্র।
এশিয়ার অন্যতম রেইন ফরেষ্ট লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান আর চা বাগানগুলোতে এখন পর্যটকদের ভীড়। নানা বয়স নানা শ্রেনীপেশার মানুষ। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে পর্যটকরা জড়ো হয়েছিলেন জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে। আবার অনেকে ঈদের একদিন আগেই পরিবার পরিজন নিয়ে পর্যটন এলাকার পাশে গড়ে উঠা রেষ্ট হাউস ও রির্সোটগুলোতে করেছেন রাত্রিযাপন।
ঈদের দিন থেকে আবহাওয়ার বৈরী আচরনের কারনে আনন্দের পাশাপাশি দূর্ভোগও পোহাতে হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, শ্রীমঙ্গল ইন হোটেল, টি টাউন রেস্ট হাউজ, গ্রীন লীফ রেস্ট হাউজ, টি রিসোর্ট, ইকো-কটেজ, বিটিআরআই রেস্ট হাউজ, লাউয়াছড়া বাংলোসহ অন্যান্য রেস্টহাউজগুলো আগামী ৫ আগষ্ট পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং হয়ে আছে।
বাংলাদেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় চায়ের রানী শ্রীমঙ্গল হচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দযের আধার। পাহাড়, অরণ্য, হাওড় আর সবুজ চা বাগান ঘেরা এই শ্রীমঙ্গল। আছে আদিবাসী বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম ও পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরবর্তী দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শ্রীমঙ্গলের অবস্থান। সারাদেশের সঙ্গে ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জনপদের রেল ও সড়ক পথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
চা ছাড়াও লেবু, আনারস, পান, রাবার, কাঁঠালসহ মূল্যবান প্রজাতির কাঠ ও স্বতন্ত্র স্বত্বার খাসিয়া, মণিপুরী, গারো সম্প্রদায়ের কারণে এ অঞ্চলের নাম অনেকের কাছে সুপরিচিত। সবকিছু মিলিয়ে যে কোন মানুষকে কাছে টানতে সক্ষম এই সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা শ্রীমঙ্গল।
এদিকে দেশের ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অন্যতম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এশিয়ার অন্যতম রেইন ফরেষ্ট এলাকা বৃষ্টির জন্য বিখ্যাত। তার মধ্যে এবারের ঈদ ও বর্ষার সময়টা অভিন্ন হওয়ায় সেখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিড়ম্বনারও শেষ ছিল না। উদ্যানের ভেতরে বসার ছাউনী ও আসন ব্যবস্থা না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে পর্যটকদের।
তবুও প্রকৃতির এমন আচরন মেনে নিয়ে ঈদের খুশীকে প্রানবন্ত করতে দল বেঁধে সবাই ঘুরে বেড়িয়েছেন। আর তাদের অনুভুতিতেও ছিল প্রশান্তির সুর।
এদিকে ঈদের ছুটিতে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক চা বাগানের অবস্থান হলেও বাগান কতৃপক্ষ প্রায় চা বাগানে নতুন পাতা চয়ন ও উৎপাদন মৌসুম থাকায় বাগানে বাগানে নিরাপত্তা বেষ্টনি লাগিয়ে দেয়ার কারনে চা বাগানের ভেতরে এবছর পর্যটকদের প্রবেশ করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তবুও বৃষ্টি বিঘ্নিত দিন উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে দল বেঁধে চা বাগানের কাছাকাছি দাড়িয়ে ছবি তুলে, গল্প করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা।
অপরদিকে বাংলাদেশে ব্যক্তি উদোগে গড়ে উঠা সীতেশ দেবের বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে বিরল প্রজাতির পশুপাখি দেখতে দিনভর ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। যার ফলে শহরতলীর প্রধান সড়ককগুলোর পাশে অবস্থিত চা বাগানগুলোতে ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়।
এদিকে ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনে সেখানে নিয়োজিত গাইডরাও খুশী। তারা আশা করছেন যদি আবহাওয়া ভালো হয় তাহলে ঈদ পরবর্তী টানা ছয় সাত দিন পর্যটকদের এমন ভিড় থাকবে।
অপরদিকে মৌলভীবাজার জেলার দর্শনীয় পর্যটন স্থানগুলোতে যাতে পর্যটকরা নিরাপদে ভ্রমন করতে পারেন সেজন্যে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনটাই জানালেন মৌলভীবাজার জেলার নবাগত পুলিশ সুপার মো. শাহ জালাল।
এসব কিছুর পরও ঈদ আসে আনন্দ, ভ্রাতৃত্ব আর দৌহার্দের বার্তা নিয়ে। একটি দিনের জন্য ধনী গরীব যে যার মতো করে পরিবার পরিজন নিয়ে বিনোদনের আশায় ছুটে চলেন প্রকৃতির নয়নাভিরাম দর্শনীয় স্থানগুলোতে।
আপনার মন্তব্য