সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ আগস্ট, ২০১৬ ০১:৩১

বেকায়দায় চসিক মেয়র নাছির

‘ঘুষ না দেওয়ায়’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) বরাদ্দ কম দেওয়া হয়েছে এবং  যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বরাদ্দের অর্থ ছাড়ের জন্যে জিপ চেয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে বেকায়দায় পড়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশোনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তাঁর সে বক্তব্যের জবাব দিতে হবে তাঁকে, এবং সেটা ৭ দিনের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) জ্যোতির্ময় দত্ত স্বাক্ষরিত এ আদেশ জারি করা হয়। চিঠিতে নাছির উদ্দিনকে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “তাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। হি মাস্ট এক্সপ্লেইন, পরিষ্কার কথা।”

বুধবার (১০ আগস্ট) চট্টগ্রামে এক সভায় নাছির বলেন, ‘দাবি মত’ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিলে যেখানে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যেত, সেখানে তা না দেওয়ায় এসেছে মাত্র ৮০ কোটি টাকা।

“আমাকে বলা হল- করপোরেশনের জন্য যত টাকা চাই দেওয়া হবে থোক বরাদ্দ হিসেবে, তবে তার জন্য পাঁচ শতাংশ করে দিতে হবে।”

সাম্প্রতিক এক ঘটনা তুলে ধরে মেয়র ওই অনুষ্ঠানে বলেন, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পাস করার জন্য একটি নতুন পাজেরো গাড়ি চেয়েছিলেন।

নাছিরকে ওই অভিযোগের ‘প্রমাণ দিতে হবে’- এমন মন্তব্য করে স্থানীয় সরকার সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “তার কথা তিনি যা বলেছেন, আমরা তার কাছে জানতে চাইব, প্রমাণ চাইব। তিনি প্রমাণ দেবেন যে মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা তার কাছে জিপ চেয়েছেন। তিনি যার কথাই বলুক, সেটা উনি বলুক।

“উনি যে কথাগুলো বলেছেন, উনি একজন রাজনৈতিক নেতা এবং একজন মেয়র... সুতরাং উনার বক্তব্য উনিই স্যাটেল করুক। আমরা আজকেই (বৃহস্পতিবার) উনার কাছে ব্যাখ্যা চাচ্ছি।”

আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগে নির্ধারিত বৈঠক ছিল। বৈঠকে দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়ররা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, 'এ ধরনের বক্তব্য উনি দিয়েছেন কি-না সেটা আগে দেখতে হবে।' এ সময় সভায় উপস্থিত থাকা আ জ ম নাছিরের বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি এভাবে বলেননি।

এরপর মন্ত্রী বলেন, 'অভিযোগ গুরুতর। এটি তদন্ত করে দেখা হবে।' এরপরই মন্ত্রী কক্ষে চলে যান। পরে সাংবাদিকরা আ জ ম নাছিরের বক্তব্য চাইলে 'পরে কথা বলব' বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পাশে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক মেয়রকে দ্রুত নিজের কক্ষে নিয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, তিনি কখনো মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেননি। কোনো কর্মকর্তা তার কাছে কখনো প্রকল্প পাস করানো বা থোক বরাদ্দ পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ঘুষও দাবি করেননি। প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনও। তিনি বলেন, তার কাছেও কখনো মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা ঘুষ বা গাড়ি দাবি করেননি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি বলেন, তারও কখনো এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। তবে তিনি চাহিদার তুলনায় কম বরাদ্দ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। আর মেয়র নাছির যেহেতু অভিযোগ করেছেন উনিই এ ব্যাপারে বলতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন আইভি। তিনি বলেন, মেয়রের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা উচিত।

বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই তড়িঘড়ি করে শুরু হয় আ জ ম নাছিরকে নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়া। মেয়রকে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, 'চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্প অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘুষ চান; মন্ত্রণালয়ের জনৈক যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আপনার কাছে একটি নতুন পাজেরো জিপ চেয়েছেন' ৫ শতাংশ ঘুষ দিলে আপনি ৮০ (আশি) কোটি টাকার পরিবর্তে ৩০০ (তিনশ) কোটি টাকা বরাদ্দ পেতেন ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করে গত ১০ আগস্ট চট্টগ্রাম থিয়েটার ইন্সটিটিউট (টিআইসি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মর্মে ১১ আগস্ট বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। আপনার আনিত এ অভিযোগসমূহ গুরুতর। এতে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে— যার প্রমাণ প্রদান আবশ্যক। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা কোথায় কখন আপনার কাছে ঘুষ দাবি করেছেন, কে কোথায় কখন পাজেরো জিপ চেয়েছেন, কোন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে কোন কর্মকর্তা জটিলতার সৃষ্টি করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক উপযুক্ত প্রমাণ আগামী ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত