সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০১:৫৯

সাংসদ রানার মামলা দ্রুত বিচারে পাঠানোর সুপারিশ

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে জেলা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। একই দলের নেতা স্থানীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাইসহ মোট ১৪ জন এ মামলার আসামি।

জেলার আদালত পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার গত ৮ আগস্ট জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ করেন।

পরদিন জেলা প্রশাসকের অনুমোদন পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়।

সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই— টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা ও ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন এবং অপর ছয় আসামিকে পলাতক দেখিয়ে ফারুক হত্যা মামলার বিচারকার্য শুরু হচ্ছে। মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিচারকার্য নিষ্পত্তির জন্য গত সোমবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।

টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অশোক কুমার সিংহ (পিপিএম) জানান, মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় গত সোমবার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে মামলাটি প্রেরণ করেন। আগামী ২৪ আগস্ট মামলার দিন ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে গত ৩০ জুন আসামিদের ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য দুটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আসামিরা হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য সম্পন্ন করা হবে বলে বিজ্ঞাপনে বলা হয়। ওই ৩০ দিনের মধ্যে সাংসদ আমানুর রহমান খান রানাসহ পলাতক ১০ আসামির কেউ আদালতে হাজির হননি।

এদিকে, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন বলেন, পুলিশ সুপারের দেওয়া চিঠিটি তিনি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ শহরের কলেজ পাড়ার তার নিজ বাসার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ঘটনার দুইদিন পর নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডে সাংসদ রানা ও তার তিন ভাইয়ের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়। পরে ওই বছরের ১১ আগস্ট গ্রেফতার করা হয় সাংসদের দেহরক্ষী আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজাকে। তিন দফায় ১৫ দিনের রিমান্ডে মুখ খোলেন আনিসুল। তিনি একই বছরের ২৭ আগস্ট টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদত হোসেনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আনিসুল ইসলাম রাজার জবানবন্দির সূত্র ধরে পুলিশ সে সময় আরেক আসামি মোহাম্মদ আলীকেও গ্রেফতার করে। ১০ দিনের রিমান্ড শেষে তিনিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিচারক শেখ নাজমুন নাহার তার জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন।

জবানবন্দিতে মোহাম্মদ আলী বলেন, 'হত্যার পরিকল্পনার সময় এমপি রানা ছাড়াও তার তিন ভাই ও আরও তিনজন উপস্থিত ছিলেন।'

পুলিশ জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েই ফারুক আহমেদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরিকল্পিতভাবে চার ভাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটান।

মামলায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১৪ জনকে আসামি করে টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম মাহফিজুর রহমান।

গত ১৬ মে চার্জশিট গ্রহণ করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক গোলাম কিবরিয়া সংসদ সদস্য আমানুর রহমান এবং তার তিন ভাইসহ পলাতক ১০ আসামির মালামাল ক্রোকে নির্দেশ দেন। একই আদেশে সংসদ সদস্য ও তার তিন ভাইসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেন আদালত। গত ২০ মে সাংসদ ও তার ভাইদের অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়।

গত বছরের ১৪ জুলাই হাইকোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করেন এমপি রানা। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে ১৫ দিনের মধ্যে তাকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেফতার ও হয়রানি না করার জন্যও নির্দেশ দেন আদালত। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার আদালত তাকে গ্রেফতার ও হয়রানির না করার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। তবে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ বহাল রাখেন।

তবে সে নির্দেশ অমান্য করে এমপি রানা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থেকে এমপি রানাসহ মামলার সব আসামিই পলাতক রয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত