সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ এপ্রিল, ২০১৭ ১৭:২৮

কে এই শিবগঞ্জের ‘জঙ্গি’ আবু?

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় থাকা আবুর (৩০) সঙ্গে বাবার পরিবারের যোগাযোগ ছিল না বলে জানিয়েছেন তার মা ফুলসানা বেগম (৫০)।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে আবুর বাবা আফসার আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আবুর মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। তিনি জানান, ৮ বছর আগে শিবগঞ্জ উপজেলার আব্বাস বাজার এলাকার রুহুল আমিনের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় আবুর। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই তার ছেলে শ্বশুর বাড়িতে থাকত। আবুর দুই মেয়ে। বাবা-মায়ের সঙ্গে আবুর খুব বেশি যোগাযোগ ছিল না, তবে মাঝে মধ্যে আসতো।

এদিকে আবুর বাবার বাড়ির পাশের কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, আবু শ্বশুরের বাড়ি ও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে ঈদ উদযাপন করত। এ নিয়ে তার বাবার সঙ্গে আবুর মতপার্থক্য ছিল। শ্বশুর বাড়ি গিয়েই আবু এসব আলাদা রীতিনীতি গ্রহণ করে। বাবা এ নিয়ে তাকে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু আবু এ সব ছাড়েনি।

আবু পেশায় একজন মসলা বিক্রেতা ছিল। তিনি হাটে বাজারে পাটি বিছিয়ে মসলা বিক্রি করতেন। তিনি বাড়ির কাছের চাতরা ফাজিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন বলে জানায় প্রতিবেশীরা।

স্থানীয়রা আরো জানান, সাধারণত মসজিদে জামায়াত শেষ হওয়ার পর আবুরা কয়েকজন মিলে নামাজ পড়ত। আবু বিয়ের কিছুদিন পর থেকে শ্বশুর বাড়িতে থাকত, সর্বশেষ বাবার বাড়িতে কিছুদিন ছিল। এরপর বাবার সঙ্গে ঝগড়া হওয়ায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তার বাবা। পরে আবু তার বাড়ির আধা কিলোমিটার দূরে জেন্টু বিশ্বাসের একটি অব্যবহৃত নতুন বাড়ি ভাড়া নেন। বাড়ির মালিক জেন্টু বিশ্বাস তাকে মূলত বাড়িটি দেখাশুনার জন্য বিদ্যুৎ বিলসহ সামান্য টাকায় ভাড়া দেন বলে জানান বাড়ির মালিকের ছেলে আনারুল ইসলাম বাবুল। তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল আবু।

অভিযানে অংশ নেওয়া কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, ঘিরে রাখা বাড়িটিতে আবুর স্ত্রী, দুই শিশু সন্তান ও আরো দুইজন থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামের এক তলা বাড়িটি বুধবার ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। যখন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা ভবনটি ঘিরে ফেলে তখন ভেতর থেকে গুলি ছোড়া হয়। এরপর বাড়িটির চারপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো সদস্য মোতায়েন করা হয়।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল ইসলাম জানান, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়ির মালিক সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাস(৭৫)। ভোর থেকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়িটি ঘিরে রেখেছে।

ঘটনাস্থল থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানান, একতলা ওই বাড়িতে স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে আবু হোসেন নামে এক ব্যক্তি অবস্থান করছে। ভোরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহ ওই বাড়িতে অভিযান চালাতে গেলে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এখনও কিছুক্ষণ পর পর গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মাইকে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া আশপাশের চারটি বাড়ির লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসন ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

এদিকে ঢাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ও সোয়াট সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। খুব তাড়াতাড়ি অভিযান শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত