সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ১৮:৩৮

ঝিনাইদহ থেকে ‘পালিয়ে’ যাওয়া ‘জঙ্গি’ চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিহত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত চারজনের একজন ঝিনাইদহ থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি আব্দুল্লাহ বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

গত শনিবার (২২ এপ্রিল) ঝিনাইদহের সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। 'অপারেশন সাউথ প' নামে চলে অভিযানটি। সেই বাড়ির মালিক ধর্মান্তরিত হওয়ার পর নাম রাখেন আব্দুল্লাহ। অভিযানে কোনো জঙ্গিকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলেন অভিযানের নেতৃত্বদানকারী খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ।

এলাকাবাসীর অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচবছর আগে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকেই আব্দুল্লাহ মোটামুটি বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করতেন। আহলে সুন্নাত অনুসারে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনে পাড়ায় বসবাস করলেও এলাকাবাসীর সঙ্গে তার খুব একটা সম্পর্ক ছিল না। একেবারে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে চলাফেরা করতেন জঙ্গি আব্দুল্লাহ। সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে রাতে ফিরতেন। তার সঙ্গে এলাকার কারো কথাও হতো না। পুরোপুরি নিজের মতো চলাফেরা করতেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তার নাম ছিল প্রভাত কুমার বিশ্বাস। তার বাবার নাম চৈতন্য কুমার। মা সন্ধ্যা রানী। বড় ভাই দিলীপ বিশ্বাস, মেজো ভাই বিপুল বিশ্বাস। আব্দুল্লাহ ছিলেন সবার ছোট।

গ্রামবাসী আরও জানায়, আব্দুল্লাহ গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তেন না। শহরে নামাজ পড়তেন।

পোড়াহাটি গ্রামের বাসিন্দা ইমন জানান, আব্দুল্লাহ মোট তিনটি বিয়ে করেছেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে দুটি বিয়ে করেন তিনি। প্রথম ঘরে তার একটি মেয়ে রয়েছে। এরপর পারিবারিক কলহে স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়। পরে মেজো ভাই বিপুল বিশ্বাসের শ্যালিকাকে প্রেম করে বিয়ে করেন প্রভাত। সেই ঘরে দুটি ছেলে সন্তান হয়। পরে তাকেও ছেড়ে দেন প্রভাত।

ইমন আরো বলেন, ধর্মান্তরিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর ফাতেমা ওরফে রুবিনা নামে একজনকে বিয়ে করেন তিনি। এ ঘরে আব্দুল্লাহর আয়েশা নামের একটি ২ বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে।

প্রতিবেশী চাঁদ আলী জানান, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর আবদুল্লাহ পোড়াহাটির ঠনঠনে পাড়ায় ওয়াহেদ নামের একজনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকায় মাঠের মধ্যে জমি কেনেন। সেখানে একটি দুই রুমের টিনশেড বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেন।

আব্দুল্লাহ’র প্রতিবেশীরা জানায়, আবদুল্লাহ’র বাড়িতে কেউ যেত না। তবে মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে অচেনা কিছু লোক তার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। বাড়িটি টিন দিয়ে চারিদিক থেকে ঘেরা ছিল। বাইরে থেকে কিছুই দেখা যেত না। বাড়িতে থাকলেও কেউ ডাকলে আবদুল্লাহ সাড়া দিতেন না। তিনি সবার থেকে বিচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা করতেন।

প্রতিবেশী শিরিনা খাতুন নামে এক নারী বলেন, আব্দুল্লাহ’র স্ত্রী ফাতেমা ওরফে রুবিনা কারও সঙ্গেই কথা বলতো না। সবসময় মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখত। তার স্ত্রীকে কেউ দেখতে পারত না। সব সময় বাড়ির গেট তালা লাগিয়ে রাখত।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পোড়াহাটিতে আব্দুল্লাহ’র বাড়িতে অভিযান শুরু হয়। পরে রাত ১১টার দিকে অভিযান স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরদিন শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে আবার অভিযান শুরু করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ৪০০ সদস্য।

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ অভিযানের দিন সংবাদ সম্মেলনে জানান, অভিযানে ২০টি রাসায়নিক কন্টেইনার, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৮-১০ মাইন সদৃশ বস্তু, প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রিক সার্কিট, ১০০ প্যাকেট লোহার বল, ১৫টি জিহাদি বই, ১টি পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি, পেসার কুকার বোম ১টি, ১টি মোটরসাইকেল ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত