মারূফ অমিত

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০৪:১২

‘মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের রাত, বিজয়ের রাত’

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাঙালি খান হিসেবে কুখ্যাত মীর কাসেম আলী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। অনেকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন সরকারকে। অনেকে আবারো দাবী তুলেছেন যুদ্ধাপরাধীর দল হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত শিবির নিষিদ্ধে।

শনিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকেই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসি বিভিন্ন রকম স্ট্যাটাস লিখেন। রাত সাড়ে দশটার পর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর অনেকে তাদের মতামত প্রকাশ করেন ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে।

তেমন কিছু স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো:

লেখক রণদীপম বসু তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন,

"বাঙালির জিহ্বায় একদা মীর বললেই সাথে জাফরও যুক্ত হয়ে যেতো অজান্তেই। এখন হয়তো কাশেমও যুক্ত হবে ! বিলিয়ন বিলিয়ন অবৈধ ডলার খরচ করে যতো দামী কাঁচিই ব্যবহার করো না কেন হে বাহে, লেজ কেটে দিলেও টিকটিকির মতোই ইতিহাসের লেজ গজিয়ে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ফের ! এটাই ইতিহাসের মাহাত্ম্য ! বাঙালির রক্ত এমনিতেই বড়ো উজ্জ্বল ! আর বাঙালির ইতিহাস যে সেই রক্তেই মাখানো, ঢাকবে কী দিয়ে ! আমাদের প্রজন্মেরা জেনে রাখুক, বাঙালির রক্তে বেঈমানির বীজ যেমনি লুকিয়ে থাকে, তেমনি সেই বীজকে ঝুলাতেও জানে তেইড়া বাঙালি ! জয় বাংলা !"

সাংবাদিক চয়ন চৌধুরী লিখেছেন,

"জয়তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! ষড়যন্ত্রকারীদের সকল অপচেষ্টা নস্যাৎ করে আপনার সরকার শুধু কাশেম আলী গংদের কেশ স্পর্শ-ই নয়; কাঙ্ক্ষিত ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর ব্যবস্থা করে জাতিকে কলংকমুক্ত করছেন। জয়তু মাননীয় প্রধান বিচারপতি! অনেক অপপ্রচারের মাঝেও আপনি ও আপনার সহকর্মীরা বাঙালি জাতিকে কলংকমুক্ত করার পথে অবিচল থেকে একাত্তরে রাজাকারদের অপরাধের ন্যায় বিচার করেছেন। জয় বাংলা!"

শাহাদাৎ রাসএল লিখেছেন,

"এই জয় আমার, এই জয় তোর। ছোট ছোট জয় মিলে আসবেই ভোর ।আজ আনন্দ মিছিলে আমাদের সাথে আসবেই। আজাদ রুমি বদি, দৃশ্যত যারা কাছে নেই।"

সাংস্কৃতিক কর্মী উত্তরা সেন শম্পা লিখেছেন,

"মীর কাসেম আলী শেষ।ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বেশ বেশ। বিজয়ের হাসি হাসছে বাংলাদেশ। জয় বাংলা।"

শিক্ষার্থী অভি হাসান লিখেছেন,

"আজ রাত ৪ দশক পূর্বের রূপকথা বাস্তব হওয়ার রাত। আজ রাত লক্ষ শহীদের পরিবারের দেখা স্বপ্নের বাস্তবতার রাত। আজ রাত একটি নরপিশাচের বিদায়ের রাত। আজ রাত রাজাকার মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের রাত। আজ রাত বিজয়ের রাত। জয় বাংলা।" 

শামীম আরা নিপা লিখেছেন,

"বারান্দায় দাঁড়ায়ে মানুষ দেখি। দেখতে দেখতে হঠাৎ ঈদ ঈদ বোধ হইলো! জয় বাংলা।"

শিক্ষার্থী মুন্না চৌধুরী লিখেছেন,

"সর্বোচ্চ আদালত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করলে,তাকে অপরাধী বলা যায় সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে। আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের প্রতি আমি সম্পূর্ণ আস্থাশীল।ডালিম হোটেলের খুনি মীর কাশেম অপরাধী।ন্যায়বিচার করেছেন আদালত। ভুক্তভোগীরা অনেক বিলম্বে হলেও ন্যায়বিচার পেয়েছেন। কলঙ্ক মুক্ত হয়েছে জাতি।বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত বিচারবৃন্দ, প্রসিকিউশনের সদস্যবৃন্দ,অপরাধের প্রত্যক্ষদর্শী,যুদ্ধাপরাধ আইন প্রণয়নকারী সংসদ সদস্য বৃন্দ,বিশেষজ্ঞ, সরকার প্রধানকে অভিনন্দন বিচার নিশ্চিত করার জন্য। ডিফেন্স কাউন্সিলের আইনজীবীদের সাধুবাদ জানাতে পারছিনা,উনারা পদে পদে বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন।অবশেষে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিজয়ী হল।"

উল্লেখ্য, শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে বাঙালি খান হিসেবে কুখ্যাত মীর কাসেম আলী। মীর কাসেম আলী ছিলেন ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা, মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের আল-বদর বাহিনীর ত্রাস, ডালিম হোটেল নির্যাতনের মূল হোতা ও জামায়াতে ইসলামীর অর্থের মূল যোগানদাতা।  

এর মধ্য দিয়ে একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ষষ্ঠ অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা হলো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত