সৌরভ দাস

০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:৫৭

বাকৃবির আবেদন ফরমের মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অনৈতিক

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার্থীদের অ্যাপ্লিকেশন ফরমের মূল্য ৬০০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হলো। বিষয়টা আপাত দৃষ্টিতে একেবারে তুচ্ছ মনে হলেও এর প্রভাবটা কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর নামে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপর খরচ বাড়ানোর এক পরিকল্পনা কষছে।

এটাকে পরিকল্পনা না বলে আমি ষড়যন্ত্রই বলবো। কারণ এখানে শিক্ষার্থীদের মতামতের কোনো তোয়াক্কা না করে একেবারে প্রশাসনের একক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এ কাজ করা হচ্ছে। যেটাকে আরেকটু সংজ্ঞায়িত করে বললে বলতে হবে- ফ্যাসিবাদ।

আপনারা একটু লক্ষ্য করুন, আজ থেকে ৫-৬ বছর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয় কেমন ছিলো, আর এখন কেমন আছে। আগে মাত্র আঠারোশ টাকায় এখানে ভর্তি হওয়া যেত। কোনো সেমিস্টার ফি ছিলো না। ভর্তি ফরমের মূল্য ছিলো ২৫০ টাকা। সে জায়গা থেকে ক্রমাগত বিভিন্ন একতরফা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ প্রশাসন আজ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কোথায় টেনে নামিয়েছে?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ছাত্রদের অভিভাবকদের টাকা বানানোর মেশিন মনে করে? নাকি মনে করে তাদের হাতে আলাদীনের চেরাগ আছে যে ঘষা মারলেই সেখান থেকে টাকার বস্তা বেরুবে?

কিছু বলতে গেলেই তো প্রশাসনের হর্তাকর্তারা অমুক বিশ্ববিদ্যালয় তমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টানেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওত রাখে আমরা কেন রাখবো না? তার মানে কি বাকৃবির স্ট্যান্ডার্ড অব লেভেল ওমুক আর তমুক বিশ্ববিদ্যালয়।

আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করি। গর্ব করি এ কারণেই যে এটাই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কৃষক শ্রমিকের ছেলেরাও পড়তে পারে। আমরা আরো গর্ব করি এটি এশিয়ার মধ্যে কৃষি শিক্ষার অন্যতম বিদ্যাপীঠ। সুতরাং সেই গর্বের জায়গাকে ধূলিসাৎ করে আপনার নোবিপ্রবি-কে স্ট্যান্ডার্ড অব লেভেল বিবেচনা করে যদি এভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পেটে লাথি মারার পরিকল্পনা করেন তাহলে বাকৃবির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা বড্ড চিন্তিত হই। এটা কোনোভাবেই একটা সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ হতে পারে না।

মাননীয় প্রশাসনকে আরেকটু স্মরণ করে দিতে চাই, আপনারা যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন তখন স্টাইপেনের টাকায়ই পড়াশুনা করতে পারতেন। অনেকে আবার সে টাকার একটা অংশ বাসায় পাঠাতে সক্ষম হতেন বলেও শোনা যায়। কিন্তু এটা তো সত্য, আপনাদের সময়কার তুলনায় এখন এই রাষ্ট্রের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সুযোগ সুবিধাও তো বাড়া উচিত। আপনাদের থেকে কম করে হলেও তো এদের দ্বিগুণ সুবিধা নিয়ে থাকা উচিত ছিলো। সেই সুবিধা যাতে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়টা নিয়েই তো আপনাদের কাজ করা উচিত ছিলো। সে জায়গায় আপনারা নিজেরা লিপ্ত হয়ে গেলেন চক্রান্তে! এ কি এদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সাথে বেইমানী নয়?

তার উপর মাঝে মধ্যে যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করে তখন কী সুন্দর করে তাদের পেছনে একেকটি বাহিনী লেলিয়ে দেন। তাদের বাসায় বাসায় শোকজ লেটার পাঠান। তাদের রক্তে হাত রাঙিয়ে ক্রীতদাসের হাসি হাসেন। সূক্ষ্ম অপরাধবোধের লেশমাত্রও দেখা যায় না আপনাদের মধ্যে।

আমরা এরকম শিক্ষা ব্যবস্থা চাই না মাননীয় প্রশাসন।

এরকম শিক্ষা ব্যবস্থার স্বপ্ন নিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি। আপনাদের এই একক সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিন্দুমাত্র সমর্থন নেই।

আমি বাকৃবির একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বলছি, যত দ্রুত সম্ভব এই অতিরিক্ত ১০০ টাকা প্রত্যাহার করুন।

সৌরভ দাস : সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাকৃবি শাখা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত