এস এম ওয়ালী উল্লাহ

১৬ মার্চ, ২০২০ ১৯:৪৫

দয়া করে ‘নবাবজাদা’ শব্দ প্রত্যাহার করুন মি. মিনিস্টার

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রবাসীর খোলাচিঠি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রবাসী এস এম ওয়ালী উল্লাহ

ডিয়ার ফরেন মিনিস্টার
আপনি নিশ্চয়ই আমার চেয়ে অনেক বেশি জানেন যে, ডিপ্লোম্যাটরা আমাদের মত ম্যাঙ্গো পিপলের মত কথা বলেন না। ডিপ্লোম্যাটরা ডিপ্লোম্যাটিক ভাবে কথা বলেন। আপনি দীর্ঘ সময় আম্রিকায় ছিলেন। আসেন আপনাকে একটা সত্যি গল্প শোনাই।

এবিসি টিভিতে নাইট লাইন নামে একটা অনুষ্ঠান হতো। টেড কাপল নাইট লাইনের অ্যাংকর ছিলেন। সালটা মনে নেই। একবার হজের সময় ইরানিয়ানদের সাথে সৌদি সিকিউরিটি ফোর্সের গণ্ডগোলে বেশ কয়েকজন ইরানিয়ান মারা যায়। এই নিয়ে দুই দেশ একে অন্যকে দোষারোপ করে। অভিযোগ পালটা অভিযোগ চলতেই থাকে। তখন ওয়াশিংটনে সৌদি অ্যাম্বাসেডর ছিলে সৌদি রয়েল ফ্যামিলিরই একজন-প্রিন্স বন্দর বিন সুলতান। আর তখন ইউনাইটেড নেশন্সে ইরানিয়ান রিপ্রেজেন্টিটিভ ছিলেন একজন কেরিয়ার ডিপ্লোম্যাট- নামটা ভুলে গেছি। নাইট লাইনে টেড কাপল দুজনকেই আনলেন। সৌদি অ্যাম্বাসেডরের একটাই যোগ্যতা ছিলো-রাজপরিবারের মেম্বার। অ্যাংকর প্রথমেই সুযোগ দিলেন-ইরানিয়ানকে। উনি ঘটনার বর্ণনা দিলেন। কাউন্টার বর্ণনায় সৌদি অ্যাম্বাসেডর ইরানিয়ান ডিপ্লোম্যাটকে বললেন-'ইউ আর এ লায়ার' এবং উনি নিজের দেশের সমর্থনে যা বলার বললেন। প্রতিউত্তরে ইরানিয়ান ডিপ্লোম্যাট বললেন-'ইউর এক্সেলেন্সি, ই'দার ইউ হাইডিং দ্যা ট্রুথ অর ইউ আর মিস ইনফর্মড'।

ডিয়ার ফরেন মিনিস্টার,
উপরে ঘটনায় আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কোনটা ডিপ্লোম্যাটের ভাষা আর কোনটা 'রাবিশ' ভাষা। ২/৩ দিন আগে করোনার হটস্পট ইটালি থেকে কয়েকজন প্রবাসী আসেন। সরকার তাদেরকে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য হাজী ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে একজন প্রবাসী 'এফ ওয়ার্ড' ইউজ করে বলে আমিও সেই ছেলেকে গালমন্দ করেছি। আমি এখনও বলি-'এফ ওয়ার্ড' ইউজ করাটা মোটেও শোভনীয় ছিলো না। পরে শুনেছি ক্যাম্পে 'মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট' বলতে যা বুঝায় তাও ছিলো না। হেলথ মিনিস্ট্রি/সিভিল এভিয়েশন থেকে তাদেরকে কোন রকম ব্রিফ করাও হয়নি। পরে কাগজে পড়লাম আপনি বলেছেন- বিদেশ থেকে দেশে এসে কেউ কেউ 'নবাবজাদা' হয়ে যায়। সচেতন মানুষ ঠিকই বুঝতে পেরেছে আপনি কাকে নবাবজাদা বলেছেন।

আমরা স্বীকার করি আমরা প্রবাসীদের অনেক দোষ। অনেক দোষে আমরা দোষী। আমরা বিদেশে থেকে যখন দেশের মাটিতে পা রাখি তখন কিছুটা ইমোশনাল হয়ে যাই। দামি সানগ্লাস পরে সব কিছুই রঙিন দেখি। একটা ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে চলি। আমাদের এয়ারপোর্টে আপনাদের লোকজন আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে না। কোন সমস্যা নিয়ে বিদেশে আপনার কনস্যুলেটে গেলে আমাদের সাথে গরু-ছাগলের মত ব্যবহার করে। আমরা লেবার। আমাদের কোন ক্লাস নেই। স্কেল নেই। তবে একটা কথা জোর দিয়ে বলতে পারি- আমরা হার্ডওয়ার্কিং পিপল; আমরা করাপ্ট নই। আমাদেরকে বাই দ্য আওয়ার পে করা হয় বলে আমাদের থেকে প্রতিটি সেকেন্ড আদায় করে নেয়। আমাদের ইনকামে কোন 'ইজি মানি' নেই। আমাদের পেছনে দুদককে দৌড়াতে হয় না। সরকারের প্রচলিত অনেক সুযোগসুবিধা আমরা নেই না/ নিতে পারি না/ নেওয়ার সুযোগ হয় না।

আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ- আর একটু মার্জিত ভাষায় কথা বলেন। সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর মুখে এই ভাষা মানায় না। আমরা খুশি হবো যদি পরবর্তী কোন প্রেস কনফারেন্সে আপনি ‘নবাবজাদা’ শব্দটা উইথড্র করেন।

ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন মি. মিনিস্টার।
এস এম ওয়ালী উল্লাহ, প্রবাসী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত