নিউজ ডেস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ১৪:০৪

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড: লণ্ডনে বাকরুদ্ধ অবস্থান

বিজ্ঞান ও সাম্প্রাদিয়কতা বিরোধী লেখক, মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সারাদেশের পাশাপাশি ফুঁসে ওঠেছে বাংলাদেশের বাইরে থাকা প্রবাসীরাও। লন্ডনের স্থানীয় বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে বাকরুদ্ধ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।

শুক্রবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিস ১০ ডাউনিং স্ট্রিট ও স্থানীয় বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

এ সময় তাদের হাতে ছিল 'উই আর অভিজিৎ, আই এম অভিজিৎ', 'অভিজিৎ উইল লিভ এজ লং এজ উই ক্যান স্পিক', 'ইউ মে কিল পিপল, বাট ইউ কেননট কিল আইডিয়াজ', 'হুমায়ুন আজাদ। রাজিব। অভিজিৎ। উইল আই বি নেক্সট?' অভিজিতের ছবিসহ ইত্যাদি স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড।  বাকরুদ্ধ এই অবস্থান কর্মসূচি মূলধারার জনগণের ব্যাপক নজর কাড়ে।

কর্মসূচির অন্যতম উদ্যোক্তা অজন্তা দেব রায় জানান- অল্প সময়ের নোটিশে তারা এই কর্মসূচির ডাক দিলেও সাড়া পেয়েছেন প্রচুর। তার মতে হুমায়ুন, রাজিবসহ আগের অন্য হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার হয়নি বলেই ঘাতকরা অভিজিৎ হত্যার সাহস পেয়েছে।

অজন্তা আরও বলেন- ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী হিংস্র দানবদের তাণ্ডব বন্ধে বিশ্ব বিবেককে আমরা জাগ্রত করতে চাই, অভিজিৎ দা নিজের প্রাণ দিয়ে আমাদের এই সত্যিটি বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন।

এদিকে ব্লগার অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে সরব ব্রিটিশ মিডিয়া।

বৃহস্পতিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) একুশে বইমেলা থেকে বাসা ফেরার পথে বইমেলার পাশেই টিএসসিতে জঙ্গি মৌলবাদী কর্তৃক আক্রান্ত হন বিজ্ঞান লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়। মারাত্মকভাবে আহত হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।

গুরুতর আহত অবস্থায় অভিজিৎ রায়কে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তারেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত বন্যাকে ঢামেক থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্যে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আসার পর প্রতিদিনই বইমেলায় যাওয়া আসা করছিলেন অভিজিৎ রায়। বৃহস্পতিবার রাতে যে জায়গায় তার ওপর হামলা হয়, ওই পথ দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বইমেলায় যায়, চলাফেরা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ঘটনাস্থল থেকে টিএসসি মোড় আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথের দূরত্ব ২৫/৩০ গজ।

টিএসসি মোড়ে মেলার জন্য ব্যারিকেড দিয়ে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসই পাহারায় রয়েছে পুলিশ। এছাড়া দুই/আড়াইশ' গজ দূরে শাহবাগ থানা। শাহবাগ মোড়, বইমেলা পেরিয়ে দোয়েল চত্বর, ফুলার রোডের মোড়, নীলক্ষেতসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশমুখে রয়েছে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা। তারপরও কীভাবে এরকম একটি হত্যাকাণ্ড ঘটল, হামলাকারীরা কীভাবে কাজ শেষে নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেল, হত্যাকাণ্ডের পর একদিন পার হলেও পুলিশ কেন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারল না- এসব প্রশ্নের জবাব নেই কারও কাছে।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি লেখক হুমায়ুন আজাদকেও কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় এই টিএসসি এলাকায়। টিএসসি থেকে মাত্র শ’ খানেক গজ দূরে ফুটপাতের ওপর ফেলে কোপানো হয় তাকে, যে ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। বইমেলার মাসে সেই তারিখের একদিন আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি খুন হলেন অভিজিৎ, যিনি সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যুক্তিনির্ভর লেখালেখি করে আসছিলেন নিয়মিত। এ জন্য তাকে হুমকিও পেতে হয়েছে। একই স্থানে আবারও একজন লেখক হামলার শিকার হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বইমেলার প্রকাশক, লেখক, পাঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যেও।

এদিকে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। তারা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জেন সাকি নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডে নিন্দা জানিয়েছেন এবং তদন্ত কাজে মার্কিন সরকার সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের খবর গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে।  দি গার্ডিয়ান, সিডনি মরনিং হেরাল্ড, বিবিসি, এনডিটিভি সহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে হত্যাকাণ্ডের খবরে ইসলামপন্থী জঙ্গি মৌলবাদী গোষ্ঠীদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখানে জঙ্গি মৌলবাদীদের দেওয়া হুমকিগুলো আলোচিত হয়।

ডেইলি মেইলের খবরে হামলার শিকার অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রীর ছবিসহ তার পারিবারিক কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি শিবির নেতা ফারাবীর ছবি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘অভিজিত বাংলাদেশে আসলে তাকে হত্যা করা হবে’ এমন হুমকি আগেই দিয়েছিলেন ফারাবী।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ঘণ্টাব্যাপী 'ওয়ার্ল্ড হেভ ইয়র সে' অনুষ্ঠানে লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্লগার আরিফুর রহমান, জার্মানিতে বসবাসরত আসিফ মহিউদ্দিন ও বিবিসি বাংলা বিভাগের সাংবাদিক মানসী বড়ুয়াসহ অন্যদের প্রতিক্রিয়া প্রচার করা হয়।
সংবাদ মাধ্যমগুলোতে অভিজিতের হত্যাকাণ্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিক্রিয়াও ব্যাপক গুরুত্ব পায়।
 

 

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত