নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ মার্চ, ২০১৭ ১৩:১১

শুভপ্রসাদের গানে শিল্পকলায় ‘অপার সন্ধ্যা’

অনুষ্ঠানের নাম 'অপার বাংলার গান'। ভালো করলে খেয়াল না করলে ভ্রম হতে পারে। এটা ওপার নয়, অপার। অপার তো বিশালত্বই। বাংলার গানকে দুই পাড়ে আলাদা না ভেবে আরও সমন্বয়ের বৃহৎ চিন্তা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদারের একক গানের এই আয়োজন করা হয়।

শুভপ্রসাদ মূলত এই বাংলারই সন্তান। আদিবাড়ি সিলেটে। বেড়ে উঠেছেন সিলেট ছিঁড়ে ৪৭ সালে ভাগ হয়ে বেরিয়ে যাওয়া শিলচরে। থাকেন পশ্চিমবাংলায়। স্বাভাবিক কারণে তাঁর কথা আর গানে উঠে এল শেকড়ের টান, স্মৃতিকাতরতা। সেটা আরও ভিন্ন রূপ নিল কয়েকদিন আগে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ও দোহার গানের দলের সদস্য কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যের কারণে। কালিকাও সিলেটের মানুষ। কালিকা প্রসাদকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতায় শুরু এই আয়োজনে শুভ প্রসাদ গেয়ে শোনান, রবীন্দ্রনাথের গান, লোকগান আর আন্দোলনের গান।

কালিকাকে নিয়ে শুভপ্রসাদ বলেন, ‘ওর সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কতটা গভীর ছিল, সেটা বলছি না। একটা কথাই বলব, সে যে গানগুলো গাইতো, সিলেট অঞ্চলের গান এবং পূর্ববঙ্গের গান। বাংলাদেশের লোক ওকে আত্মজন মনে করে। নিজের ছেলে মনে করে। তার কর্মক্ষেত্র ছিল পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের লোক তাকে নিজের ছেলে মনে করে। আবার সে শীলচরের, আসামের ছেলে বলে তারাও ওকে নিজের ছেলে মনে করে। আমি এই সময়ে কোনো বাঙালিকে দেখিনি যে তিন বাংলার মানুষের আপন হতে পেরেছে। যার কাছে এসে সমস্ত কাঁটাতার তুচ্ছ হয়ে গেছে।’

এরপর বললেন, ‘দিতে আসিনি কিছুই, নিতে এসেছি।’

কী নিতে এসেছেন? বললেন, ‘বাংলাদেশের সবুজে, শ্যামলে, সুনীলে, জলে-স্থলে, সবকিছুতে একটা অনুপ্রেরণা আছে। ভালো থাকার অনুপ্রেরণা। ভালো স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা। সেটাই নিতে এসেছি।’


সঙ্গীতা ইমামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী, নাট্যজন শংকর সওজাল, চলচ্চিত্র নির্মাতা শাকুর মাজিদ। ভারত থেকে আসা শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, বাদযন্ত্রশিল্পী দিব্যেন্দু ব্যানার্জি আর অভিজিৎ চক্রবর্তীকে সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠান শেষ হয় কালিকাপ্রসাদের লেখা শেষ গান, 'আমি তোমারই নাম গাই' দিয়ে। কদিন আগে মুক্তি পাওয়া ভূবন মাঝি চলচ্চিত্রের এই গান যখন মানুষের মুখে মুখে ফিরছে তখনই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তিনি। এই গানের সাথে হল ভর্তি সমস্ত দর্শকও শুভ প্রসাদের সাথে গেয়ে উঠেন। যেন কালিকারই নাম গাইছিলেন সকলে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত