মো. মুন্না মিয়া, জগন্নাথপুর

০৯ নভেম্বর, ২০১৭ ২০:৩২

রাধারমন দত্তের স্মৃতিরক্ষার উদ্যোগ নেই

বৈষ্ণব কবি রাধারমন দত্ত ধামাইল গানের জনক হিসেবে পরিচিত। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) লোকসঙ্গীতের এই পুরোধা ব্যক্তির ১০২ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

শত বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁর জন্মভূমিতে আজো তাঁর স্মৃতি রক্ষায় নেই রাষ্ট্রিয় কোনো উদ্যোগ। ২০১৫ সালে অর্থমন্ত্রী এবং অর্থ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী রাধারমণ দত্তের শততম মৃত্যু বার্ষিকীতে 'রাধারমন স্মৃতি কমপ্লেক্স' নির্মাণ করার জন্য জায়গা নির্ধারন করলেও দুবছর পেরিয়ে গেলে তাঁর কোনো গতি দেখা যায়নি।

তবে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাবিরুল ইসলাম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে' বলেন, 'ইতিমধ্যে আমরা শিল্পকলা একাডেমিতে রাধারমন স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মানের জন্য চাহিদা প্রেরণ করেছি। আশাকরি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে স্মৃতি কমপ্লেক্সের কাজে এগিয়ে যাব। "

উইকিপিডিয়ায় উল্লেখ রয়েছে- রাধারমন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে ও ১২৪১ বাংলায় সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার আতুয়জান পরগনার কেশবপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর পিতা রাধামাধব দত্ত মাতা সুর্বণা দেবীও ছিলেন বিদগ্ধ ব্যাক্তি। কিশোর বয়স থেকে রাধরমণ সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সৃষ্টিকর্তার স্বরূপ অনুসন্ধানে মনোনিবেশে করেন। এজন্য তিনি বিভিন্ন সাধুসন্তের আদেশ উপদেশ অরে অরে পালন করতেন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি মৌলভীবাজারের ঢেউপাশা গ্রামের সাধক রঘুনাথ গোস্বামীর সাধন ভজনের কথা জ্ঞাত হয়ে তিনি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ গ্রহণ করেন। শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব মতবাদের উপর ব্যাপক পড়াশুনা করেন। সবশেষে তিনি সহজিয়া মতে সাধন ভজন করেন। এজন্য তিনি বাড়ির পাশে নলুয়ার হাওরের একটি উন্মুক্ত স্থানে পর্ণকুঠির তৈরী করে; সেখানে সাধন ভজন করতে থাকেন। তিনি কৃষ্ণভাবে বিভোর হয়ে রাধাকৃষ্ণ প্রেমলীলা নিয়ে লোকগান রচনা করেন। তিনি ভজন সংগীতে বিভোর হয়ে গান রচানা করে নিজেই তা গাইতেন। তাঁর মুখের বাণীতে তাঁর শিষ্যগণ তা কাগজে লিখে রাখতেন। তাঁর নিজ হাতে রচিত গানের কোন পান্ডুলিপি নেই। কারণ তিনি তাৎনিকভাবে ভাবরসে বিভোর হয়ে গীতরচনা করতেন।

কবি রাধারমণের পুরো পরিবারের পারিবারিক জীবন ধারায় বৈষ্ণব ও সুফীবাদের প্রবল প্রভাব ছিল পারিবারিক। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় উপসণার প্রধান অবলম্বন সংগীতের সংঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল শৈশব থেকেই। লোককবি জয়দেবের গীতগৌবিন্দ'র বাংলা অনুবাদ করেছিলেন তাঁর পিতা রাধামাধব দত্ত। পিতার সংগীত ও সাহিত্য সাধনা তাকেও প্রভাবিত করেছিল। রাধারমণ তাঁর শৈশব, কৈশর, যৌবন ও পরিণত বয়সে সে ধারাবাহিকতা তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল।

রাধারমনের বেশ কিছু গানের বই বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।

গ্রামবাংলার বিয়েশাদীতে রাধারমনের ধামাইল গান খুব জনপ্রিয়। দুই বাংলার বেতার ও টেলিভিশনে রাধারমনের গান প্রায়স প্রচারিত হচ্ছে। ইদানিং বাংলা সিনেমাতে রাধারমনের বেশ কিছু গান সংযোজিত হয়েছে।

ব্যক্তি জীবনে রাধারমন দত্ত ছিলেন তিন পুত্রের জনক। তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুত্রসহ স্ত্রী একযুগে মারা গেলে তার ভাবান্তর ঘটে এবং তার মনে বৈরাগ্য ভাবের সৃষ্টি হয়। সেই থেকেই তিনি সংসার ত্যাগী যোগীর মতো সাধন ভজনে মগ্ন হয়ে যান। তার প্রথম পুত্র বিপীন বিহারী দত্ত তখন তার মামার বাড়ি মৌলভীবাজারের ভুজবল গ্রামে যান এবং সেখানে স্থায়ী বসবাস করেন। তার বংশধরেরা বর্তমানে সেখানে বসবাস করছেন।

রাধারমন দত্ত ৮২ বছর বয়সে ১৩২২ বাংলার ২৬ কার্তিক ১৯১৫ খ্রীস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

জন্মভূমি জগন্নাথপুর পৌর শহরের কেশবপুর গ্রামে তাঁর দেহ সমাহিত করা হয়। তাঁরই শেষ স্মৃতি শ্মশান ঘাটটি বর্তমানে সমাধি হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। কেশবপুর গ্রামের নরসিং মালাকারের স্ত্রী নিদুমনি দাস রাধারমন দত্তের সমাধিতে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সেবায়িতের ভূমিকায় কাজ করেছেন। প্রায় ৮ বছর আগে নিদুমনি দাস মারা যান। বর্তমানে একই এলাকার রশু মালাকারের স্ত্রী অনিতা রাণী মালাকার রাধারমণ মন্দিরের দেখাশোনার কাজ করে যাচ্ছেন।

স্থানীয় রাধারমণ দত্ত স্মৃতি সংসদের উদ্যেগে ১০২তম মৃত্যু বার্ষিকী শুক্রবার সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছে বলে আয়োজকদের মধ্যে আছকির মিয়া সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করে বলেন,  ২০১৫সালে সরকারীভাবে রাধারমণ দত্তের শততম মৃত্যুবার্ষিকী দুদিনব্যাপি জাকজমক ভাবে জগন্নাথপুর ও সুনামগঞ্জে উদযাপিত হয়েছিল।

এবার ছোট্ট আকারের স্থানীয় রাধারমন দত্ত স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রবীণ রাজনীতিবীদ সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিক আহমদ, জেলা পরিষদ সদস্য মাহাতাবুল হাসান সমুজ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু,ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, জগন্নাথপুর পৌর সভার প্যানেল মেয়র শফিকুল হক, জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদ চৌধুরী, স্থানীয় কাউন্সিলর তাজিবুর রহমান।

সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে থাকার কথা রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক ব্যারিষ্টার এম এনামুল কবির ইমন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক শামছুল আবেদীন।

দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বাউল শিল্পী হারুন মিয়া, বাবলী সরকার, শিল্পী লায়লা, চ্যানেল আই সেরা কন্ঠের শিল্পী বুশরা আক্তার ঝুমু, ফয়সল গনিসহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে আসা রাধারমণ ভক্তবৃন্ধ ও স্থানীয় বাউল শিল্পিগন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত