শেখ মো. নাজমুল হাসান

০১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০২:৪১

পহেলা জানুয়ারি যেমন করে নববর্ষ হলো

হাকালুকি হাওর থেকে বছরের শেষ সূর্যাস্তের ছবিটি ধারণ করছেনে তপন কুমার দাস

দিনপঞ্জির হিসাব রাখার জন্য প্রচলিত-অর্থে যে ‘ইংরেজি সাল’ বা ‘ইংরেজি ক্যালেন্ডার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়, উৎপত্তিগতভাবে সে নামকরণ সঠিক নয়। এটি আসলে ‘গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার’। ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি কর্তৃক সংশোধিত ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ই বর্তমানে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিত।

প্রচারিত যে ক্যালেন্ডারটি প্রথমে ব্যবহার করা হতো সেটি ছিল রোমান ক্যালেন্ডার এবং এটি ছিল চন্দ্রকেন্দ্রিক এবং এতে মাসের সংখ্যা ছিল দশটি। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাসটি ছিলো মার্চ মাস। সে সময়ে মার্চের ১ তারিখকে বছর শুরুর দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। এরপরে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে নতুন দুটি মাস যুক্ত করেন – জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি। এরপর রোমান কনসুল এর ইচ্ছানুযায়ী বছরের প্রথম মাস মার্চ হতে জানুয়ারিতে পরিবর্তন করা হয়।

পহেলা মার্চ থেকে জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে চালু করতে বেশ সময় লাগে। এটি প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রোমে। যদিও তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হতো। কারণ তখনও বিভিন্ন স্থানে জনগণ মার্চের ১ তারিখকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে ব্যবহার করতো।

এরপরে ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমসম্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ চালু করেন, তখন জানুয়ারির ১ তারিখকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মূলত তখন থেকেই এই রীতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

আধুনিক বিশ্বে নববর্ষ হিসেবে পহেলা জানুয়ারিকে প্রচলিত করার ব্যাপারে ‘রিপাবলিক অফ ভেনিস’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও বর্তমানে এই দেশটির আর কোন অস্তিস্ত নাই, ১৭৯৭ সালে দেশটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে।

‘রিপাবলিক অফ ভেনিস’ ১৫২২ সাল হতে পহেলা জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করতে শুরু করে। এরপর ১৫৫৬ সালে স্পেন ও পর্তুগাল; ১৫৫৯ থেকে প্রুশিয়া ও সুইডেন; ১৫৬৪ তে ফ্রান্স; ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ড, ১৭০০ সাল হতে রাশিয়া; ১৭৫২ সাল থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলো নববর্ষের রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে।

ইসরায়েল গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। সেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অ-ইহুদি উৎস হতে উৎপন্ন এই রীতি পালনের বিরোধিতা করে থাকে। কিছু কিছু দেশ আজও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করেনি। যেমন- সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া এবং আফগানিস্তান। এসব দেশ ইংরেজি নববর্ষও পালন করে না।

সকলকে শুভ নববর্ষ। শুভ হোক ২০১৭ সাল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত