ডা. এনামুল হক এনাম

২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১২:১৫

সর্দি-জ্বর?

শীত পড়েছে, আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। সময়টা এখন সর্দি-জ্বরের। সর্দি-জ্বর বা কমন কোল্ড এর বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নেয়া জরুরি। সর্দিজ্বরের জন্য ২০০’র অধিক ভাইরাস দায়ি হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূল আসামী রীণো ভাইরাস (Rhinovirus), করণা ভাইরাস(Coronaviruse), শ্বাসতন্ত্রের সিনসাইটাল ভাইরাস (Respiratory syncytial virus (RSV) এবং প্যারাফিনফ্লুয়েনজা ভাইরাস (Parainfluenza virus)।

সর্দিজ্বরের ক্ষেত্রে প্রথমেই শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হয়। শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় দুর্বল বিধায় এই ধরণের ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রকে সহজে আক্রমণ করে। তাই শুরু হাঁচি বা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহে। যতবারই হাঁচি দিচ্ছি ততবারই বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছি হাজারো ভাইরাস, যারা ছুটে যাচ্ছে নতুন হোস্টের সন্ধানে।

শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাসগুলো তাদের বংশ বৃদ্ধিতে তৎপর। এই সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে বিধায় ধুলাবালির সংস্পর্শে এসে নাসারন্ধ্র এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশ আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় নাক দিয়ে পানি পড়া। নাক বন্ধ হয়ে চরম অস্বস্তির সৃষ্টি হয়। রোগ প্রতিরোধের কোষগুলোকে আক্রান্ত করে ভাইরাসগুলো।

সর্দিজ্বরের দ্বিতীয় পর্যায়ে শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত বিধায় শুরু হয় কাশি। ভাইরাসযুক্ত কাশি যদি কেউ খেয়ে ফেলে তবে তা পেটে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। তাহলে কি কাশি গিলে ফেলবো? আরে নাহ… ভীতির ব্যাপারটা এখানেই। এখনই শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে। প্রতিটি কাশির সাথে আশেপাশে ছড়াবে হাজারো ভাইরাস।

অবশ্য আশার কথা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে একশনে নেমেছে। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে অনেক ভাইরাস এমনিতেই মরতে শুরু করে।

শরীর দুর্বল লাগে কারণ আমাদের শরীর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে একটি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে।

জ্বর যত বেশি বাড়ে শরীরের দুর্বলতা তত বৃদ্ধি পায়। এই সময় পানি ছাড়া কোনও কিছু খেতে স্বাদ পাওয়া যায় না কারণ স্বাদ গ্রহণের তন্ত্র ভাইরাসের আক্রমণে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে হালকা থেকে তীব্র মাথা ব্যথা হতে পারে। এই সময় গলা শুকিয়ে যায়। বেশি পানি খেতে ইচ্ছে করে। চোখের মত অধিক সংবেদনশীল অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং প্রদাহ দেখা দেয়।

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে মানে আমাদের চেম্বার অব কমান্ড ব্রেইন মানে মগজ এর হাইপোথ্যালামাস থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সংকেত যাচ্ছে সারা শরীরে। হাইপোথ্যালামাস দ্বারা শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা (থার্মোস্ট্যাট) নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ রক্ত প্রবাহ সহ শরীরে অভ্যন্তরীণ সকল কার্যক্রম বেড়ে গেছে, সবাই ব্যস্ত ভাইরাসদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।

ওহ আরেকটা ব্যাপার, তাপমাত্রা বাড়লে এক্ষেত্রে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি অনেকাংশেই প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে শ্বেত রক্ত কণিকার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শ্বেত কণিকা দ্রুত ভাইরাসের প্রতিরোধ গড়ে তোলে দুশমনকে সমূলে ধ্বংস করে।

এন্টিহিস্টামিন আর প্যারাসিটামলই যথেষ্ট কার্যকরি ঔষধ। ৩ থেকে ৭দিন ভোগান্তির, এরপরই সর্দিজ্বর ভালো হয়ে যায়। কিছুক্ষেত্রে সেকেন্ডারি ইনফেকশন ঠেকাতে এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। নাক বন্ধ থাকলে এন্টাজল ড্রপ খুব কাজে দেয়, তবে তা ৩-৫দিনের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। আর হ্যাঁ, এই সময়ে লেবু চা খুব ফলপ্রদ।

ডা. এনামুল হক এনাম : প্রভাষক, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত