এনামুল হক এনাম

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১২:২৫

সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কিছু পরামর্শ

এইচএসসিতে অনেকের রেজাল্ট ভালো হয়েছে অনেকের মোটামুটি, সবাই ভালো করে লেখাপড়া করছো ভালো সাবজেক্টে ভালো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য। তোমাদের সবার পছন্দসই বিষয়ে পড়ার সুযোগ হোক আমি তা চাই, আমরা সবাই চাই।

কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আসন সংখ্যা সীমিত, এবং পাশ করা সব ছাত্রছাত্রীদের পছন্দ মতো সাবজেক্টে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়া কখনোই সম্ভব নয়।

অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীই পছন্দসই বিষয়ে পড়ার সুযোগ পায় না।

আমি ভর্তিচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেক ফ্রাস্ট্রেশন কাজ করতে দেখি। দুশ্চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোথায় ভর্তি হবো, পারবো কি না, হবে কি না... না হতে পারলে কি হবে... হাজারো প্রশ্ন মনের দেয়ার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে নিয়ত।

হবে, এমন হওয়াটা স্বাভাবিক, আমাদেরও হয়েছে, সবারই এমন হয়।

কেউ মেডিকেলে, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং এ পরীক্ষা দেবে।

এখন কথা হচ্ছে সবাইতো আর চান্স পাবে না, অনেক ভালো মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরাই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারো, এটাই নিয়তি।

চান্স পেলে ভালো।
না পেলে কি করবে?

একদম নিরাশ হওয়া চলবে না। জীবন এখানেই থেমে নেই। মনে রাখতে হবে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে তুমি এমন একটি ধাপে চলে এসেছো যে আর মাত্র ৪-৫বছর পরিশ্রম করলেই তুমি বাবা সুসন্তান, দেশের সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারবে। চান্স না পেলে কখনোই মনে করবেন না যে হেরে গেছি, হেরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশে এখন চাকুরী-ব্যবসা বাণিজ্যের অনেক সুযোগ সুবিধা আছে। সব সাবজেক্টেই ওপেন তোমার পেশা, যেকোনো সাবজেক্ট থেকে একটি ভালো অবস্থানে তুমি চলে যেতে পারো।

একজন ডাক্তার হয়ে যদি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কারোও ১৫-১৬বছর লাগে।

একটি ভালো সাবজেক্ট এ (যেমন ধরো ইংলিশে অনার্স করে) গ্রাজুয়েশন করে তুমি অনায়াসে বি,সি,এস দিয়ে মাত্র ১০বছরের মধ্যে নিজেকে সরকারের একটি উঁচু পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারো, যেখান থেকে মানুষ সেবার অনেক সুন্দর সুযোগ তোমার কাছে আসবে, যদি তুমি সৎ থাকো তবে সর্বক্ষেত্রেই খোদা তোমার সহায় হবেন।

যেকোনো সাবজেক্টে অনার্স বা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে নিয়ে তুমি তা পারবে। অবশ্যই পারবে। ১বছর একটু কষ্ট করলে বিসিএস পাশ করা কোনো ব্যাপার না, একাগ্রতা থাকলে।

এছাড়া বেসরকারি ব্যাংক, বিভিন্ন চ্যানেল, মাল্টিনেশনাল কোম্পানি, মোবাইল কোম্পানিসহ হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে তুমি তোমার মেধা অনুযায়ী কাজ পেতে পারো।

আর ব্যবসা করলে তো তোমার সামনে পুরোটাই উন্মুক্ত, বরং চাকরী দিতে পারবে অনেক মেধাবীকে উলটো।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো তোমার যোগ্যতা, যোগ্যতা বলে (শক্তি) তুমি নিজেকে যেকোনো জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। তোমার যোগ্যতা না থাকলে, যে তোমার চাকরীর জন্য সুপারিশ করবে, চাকরী হওয়ার পর তোমার অযোগ্যতা প্রমাণিত হলে সেই লজ্জা পাবে।

আর নিজেকে যোগ্য করে তোলার এটাই সর্বোত্তম সুযোগ, আর এই সুযোগ বার বার আসবে না।

আমার অনেক বন্ধু বান্ধব আছে যারা খুব ভালো লেখাপড়ায় কোনো কালেই ছিলো না, মোটামুটি রেজাল্ট করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা শেষ করেছে, তাদের মধ্যে ছিলো একাগ্রতা, আর নিজের যোগ্যতা প্রমাণের স্পৃহা। বিশ্বাস করো তারা সবাই আজ স্বীয় অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত, আমি যখন তাদের নাম লই--- গর্বে বুক ভরে যায়।

আমি চাইবো তোমারাও কোথাও চান্স না পেলে হতাশ না হয়ে, যেখানেই সুযোগ পাও সেখানেই নিজেকে শত ভাগ উজাড় করে দিয়ে পৌঁছে যাও সাফল্যের চরম শিখরে।

আমাদের সবার দোয়া তোমাদের সাথে, সবসময়।

  • এনামুল হক এনাম : শিক্ষক, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত