নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জুন, ২০১৮ ১৭:১০

এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়তে হয়নি কামরানকে

সিলেট সিটি নির্বাচন

এরআগে দলের ভেতরে কখন এমন প্রতিদ্বন্দ্বতিয়া পড়তে হয়নি কামরানকে। সিটি বা পৌরসভা নির্বাচনে গত প্রায় দুই দশক ধরে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানই ছিলেন আওয়ামী লীগের অপ্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী। এবার প্রথমবারের মতো দলের ভেতরেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়লেন সিলেট সিটি করপোরেশনের দীর্ঘকালিন এই মেয়র।

যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরান, সেই কমিটিরই সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দাবি করে বসেছেন। কেবল আসাদই নন আওয়ামী লীগের আরো ৩ নেতা দাবি করেছেন দলীয় মনোননয়। এর বাইরে ক্রীড়া সংগঠক ও ব্যবসায়ী মাহিউদ্দিন সেলিমও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোননয়ন দাবি করেছেন।

স্থানীয়ভাবে প্রার্থীতা চুড়ান্ত না হওয়ায় এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়িয়েছে কেন্দ্রে। আজ রাত আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় চুড়ান্ত হবে সিলেট সিটিতে কে  হবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ফলে আওয়ামী লীগ অনুসারীসহ আজ সিলেটনগরবাসীর দৃষ্টি ঢাকায় আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার দিকে। কে প্রার্থী হচ্ছেন- এই ঘোষণা শোনার অপেক্ষায় সবাই।

আগামী ৩০ জুন সিলেট সিটির নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

২০০২ সালে সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীতের পর টানা দুই দফা সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র হন আওয়ামী লীগ বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এরআগে পৌরসভা থাকাকালে আরো দুই দফা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন কামরান। তারও আগে ছিলেন পৌর কাউন্সিলর।

সদা হাস্যোজ্জ্বল ও সজ্জ্বন কামরানকে তখন নগরীর জনপ্রিয়তম নাম। তাকে হারানো অসম্ভব বলে মনে করতেন তাঁর বিরোধী অনেক নেতাও। আর কামরানের অনুসারীরা স্লোগান দিতেন- ‘এই শহরের প্রিয় নাম, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান’। বিএনপি এমনকি জামায়াতেও কামরানের ভোটব্যাংক রয়েছে বলে গুঞ্জন আছে।

কামরানের জনপ্রিয়তার ভাটা পড়ে গত সিটি নির্বাচনে। ২০১৩ সালের ১৫ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে প্রথম বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

সে নির্বাচনে পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। কামরানের বিরুদ্ধে উন্নয়নবিমুখতার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।

এই নির্বাচন ও পরবর্তীতে সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হয় কামরানের। দলের অনেকের সাথেও দুরত্ব তৈরি হয় তাঁর। সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও মহানগর আসাদউদ্দিন আহমদের সাথে কামরানের দুরত্ব রয়েছে বলেও গুঞ্জন আছে।

নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিমর্ষ, ব্যথিত কামরানকে আরো বিপাকে ফেলে দেয় দলের ভেতরের এইসব দ্বন্দ্ব-বিভক্তি। এই সুযোগে মেয়র পদে প্রার্থী হতে শক্তভাবে মাঠে নামেন আসাদ উদ্দিন। কামরান গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন দাবি করে বেশ কিছুদিন ধরেই মেয়র প্রার্থী হতে মাঠে তৎপর রয়েছেন আসাদ উদ্দিন।

কামরানের 'দুর্দিনের' সুযোগে হঠাৎ তৎপরতা শুরু করেন অর্থমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট ক্রীড়াসংগঠক ও ব্যবসায়ী মাহিউদ্দিন সেলিম। আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র প্রার্থী হতে তিনিও তৎপরতা চালাচ্ছেন।

এই তিনজনসহ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ৫ নেতা। আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভায় এদের মধ্য থেকে একজনকে চুড়ান্ত করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, দলীয় প্রধান আমাকে অনেক আগেই সবুজ সংকেত দিয়ে মাঠে তৎপরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়ন করে চলছি। ফলে আশাকরছি শনিবার আমাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে অনেক যোগ্য প্রার্থী আছেন। সবাই মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে দল যাকে মনোনীত করবে সবাই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত